কানাডীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ

চীনে আটক দুই কানাডিয়ান নাগরিকের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। এ ঘটনায় কানাডা ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে চীনভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক নির্বাহী (সিএফও) মেং ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে আটক করে কানাডা। এরপর থেকেই চীনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। সে বছরই মাইক্যাল কভরিগ নামের সাবেক কানাডিয়ান কূটনীতিক ও মাইক্যাল স্পাভর নামের একজন ব্যবসায়ী কনসালট্যান্টকে আটক করে চীন। অবশেষে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে। খবর এএফপি ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

শুক্রবার চীনা আদালতের কর্মকর্তা জানান, কভরিগের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে স্পাভরের বিরুদ্ধে দানদং শহরে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ অনুসারে, তারা উভয়েই চীনের রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য বাইরে পাঠিয়েছে। অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে তারা উভয়েই চীনা আইনে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে পারেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ওয়ানঝুকে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে কানাডা। কানাডার এক আদালত গত মাসে দেয়া রায়ে বলেছেন, আইনজীবীরা তাকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করার ব্যাপারে সন্তুষ্টজনক যুক্তি উপস্থাপন করতে পেরেছেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে।

চীনে দুই নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে কানাডা। শুক্রবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানান, আটক করার ১৮ মাস পর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ। তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে কানাডার উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড জানান, তিনি এ ঘটনায় খুবই কষ্ট পেয়েছেন এবং চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আটক দুই কানাডীয় নাগরিককে যেন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয়া হয়।

নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে গত জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে আটক দুই কানাডীয় নাগরিকের সঙ্গে তাদের দূতাবাস কর্মীদের মাসিক সাক্ষাৎ বন্ধ রেখেছে চীন। শুক্রবার বেইজিং জানায়, কভিড-১৯ পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার আগপর্যন্ত এ প্রক্রিয়া ফের শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছিল, দুই কানাডীয় নাগরিক সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন এবং তারা এমন অঞ্চলে রয়েছেন, যা কভিড-১৯-এ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়নি।

তবে বিষয় সম্পর্কে অবগত কয়েকটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, দুই আটক ব্যক্তি ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং আটকের প্রথম ছয় মাসে বাতি জ্বালানো থাকা অবস্থায় ঘুমাতে বাধ্য করা হয়।

চীনের কানাডার সাবেক রাষ্ট্রদূত গি স্যান্ত-জ্যাক অটোয়াকে কঠোর অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানান। কানাডীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিবিসিকে তিনি বলেন, নরম কূটনৈতিক কথামালা নয়, বরং কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে এ বিষয়টি সম্পৃক্ত করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ দুই ঘটনার মধ্যে রাজনীতি ছাড়া আর কোনো সংযোগ নেই।

কানাডীয় বিচার বিভাগের স্বাধীন বিচারিক প্রক্রিয়ায় চীন সরকারের অসন্তোষ থেকে নেয়া এ স্বেচ্ছাচারী আটকাদেশের বিরুদ্ধে মিত্রদের নিয়ে বেইজিংয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান ট্রুডো।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *