কাচ শিল্পে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে পিএইচপি

দেশে প্রতি বছর বাড়ছে কাচের চাহিদা। বিপরীতে একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি সংকটে পড়ে বন্ধই করে রেখেছে উৎপাদন কার্যক্রম। তবে ভিন্ন চিত্র বেসরকারি খাতে। ধারাবাহিকভাবে কাচ শিল্পের প্রসার ঘটছে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের হাত ধরে। কাচ শিল্পে সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে সম্প্রতি আধুনিক রিফ্লেকটিভ গ্লাসের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে পিএইচপি ফ্যামিলি। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে আগামী বছরের শুরুতেই শব্দ নিয়ন্ত্রণকারী (সাউন্ড প্রুফ) গ্লাস উৎপাদনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া কাচ শিল্প সম্প্রসারণে চট্টগ্রামের পাশাপাশি ফেনী জেলায়ও কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এজন্য জমিও কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি।

পিএইচপি ফ্যামিলির উদ্যোক্তারা জানান, বিশ্বখ্যাত স্পাটারিং কোটিং টেকনোলজি ব্যবহার করে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এই রিফ্লেকটিভ গ্লাস উৎপাদন শুরু করেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং রফতানি দুই বাজারেই কাচ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় পিএইচপি। রিফ্লেকটিভ গ্লাসকে প্রতিফলিত গ্লাসও বলা হয়। এই গ্লাস মূলত ব্যবহার করা হয় ঘরকে রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা করে পর্যাপ্ত আলোর জন্য। এই গ্লাস লাগানোর ফলে বিল্ডিংকে আয়নার মতো দেখায় এবং ভবনের ওজনও কমে যায়। এই স্পাটারিং কোটিং টেকনোলজিতে মোট ১০টি কালার রিফ্লেকটিভ গ্লাস উৎপাদন শুরু করেছে পিএইচপি। এর মধ্যে রয়েছে ডার্ক-ব্লু, ওশান-ব্লু, ডার্ক-গ্রিন, ডার্ক-গ্রে, গোল্ডেন, পার্পল, পিংক, ব্রোঞ্জ ও সিলভার রিফ্লেকটিভ গ্লাস। এই টেকনোলজিকে সাপোর্ট দিতে সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড এলাকায় ২০০৫ সালে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের হাত ধরে উৎপাদন হয় ফ্লোট গ্লাস। তখন থেকে দৈনিক ১৫০ টন ফ্লোট গ্লাস উৎপাদনক্ষমতা দিয়ে শুরু। এরপর প্রায় ১৩ বছর পর ২০১৯ সালে নতুন চুল্লীতে ৩০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগে দৈনিক অরো ১৫০ টন অর্থাৎ মোট ৩০০ টন ফ্লোট গ্লাস উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ায় পিএইচপি। এখন পর্যন্ত ফিলিপাইন, নেপাল, ভুটানসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস রফতানি হয়েছে।

কাচ শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমানে দেশে বছরে কাচ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টনের বেশি। বছরে ৯ থেকে ১০ শতাংশ হারে কাচের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা থাকায় উৎপাদনের পাশাপাশি কাচ আমদানিও হচ্ছে।

দালান, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কিংবা অফিসে সাজসজ্জায় দেয়ালের পরিবর্তে বেশি ব্যবহূত হয় ফ্লোট গ্লাস। মূল্য সংযোজনকারী পণ্য হিসেবে পিএইচপি উন্নতমানের আয়না এবং টেম্পার্ড গ্লাস উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে।

পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমির হোসেন এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ দেশে প্রথম বিশ্বমানের ফ্লোটিং পদ্ধতিতে গ্লাস উপাদান ও বাজারজাত শুরু করে। এর ফলে বিদেশ থেকে গ্লাস আমদানির হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। উন্নতমানের কাচ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করায় প্রতি মাসে ৫০ কোটি টাকারও বেশি আমদানির বিকল্প উৎপাদন সুবিধা পাচ্ছে দেশ। সম্প্রতি উৎপাদনে যাওয়া আধুনিক রিফ্লেকটিভ গ্লাসে রোদের প্রখরতা প্রতিহত করে ঘরে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করবে এবং সূর্যের বিকিরণ হ্রাস করবে। এটি উত্তাপ ও শীততাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যয় হ্রাস করে। এ কারণে এটি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। কাচ শিল্পে আমরা উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে উৎপাদন লাইনে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেষ্ট থাকি।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভবনে এখন ইটের বদলে কাচের ব্যবহার বেড়েছে। কারণ কাচ ব্যবহার করলে লোড কম হয়। নির্মাণ ব্যয়ও কমে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এজন্য দেশের চাহিদা অনুভব করে ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন বাড়ছে কাচ শিল্পে। উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি। পিএইচপি ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নির্দেশনায় গত প্রায় ১৫ মাস কাজ করে সাধারণ ফ্লোট গ্লাসের পাশাপাশি রিফ্লেকটিভ গ্লাস উৎপাদন শুরু করল পিএইচপি। যেসব দেশে গ্রীষ্মকালে সূর্যের প্রখরতা বেশি ও প্রচণ্ড গরম পড়ে অর্থাৎ তাপমাত্রা বেশি, সেসব দেশে এই রিফ্লেকটিভ গ্লাস ব্যবহার করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের তাপমাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশে এই গ্লাসের চাহিদাও বেশ বাড়ছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *