করোনা সংকটে করুণ দশায় পড়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরের আব্দুর রহিম নামের এক সবজি চাষি। নিজের সামান্য আর লিজ নেয়া জমিতে চাষ করা সবজির পরিচর্যা এবং বাজারজাত করতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে টিকে থাকাই এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে তার। স্বপ্ন ছিল এক স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন হবে। সুখের নীড়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাসের। তাই নিজের সর্বস্ব এবং একাধিক এনজিও থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে লিজ নেয়া তিন একর জমিতে করেছিলেন অগ্রিম জাতের বেগুন চাষ। কিন্তু করোনা সংকট শুরুতে বাজারে বেগুনের দাম পড়ে যাওয়ায় বাজারজাত করতে গিয়ে লাভ তো দূরের কথা পুঁজিতে টান পড়ে। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ওই জমিতে আবারো চাষবাসের চেষ্টা চালান তিনি। কিন্তু অর্থ সংকটে পরিচর্যা না করতে পারায় বেগুনে পোকার আক্রমণ হয়।
পোকা বা বালাই দমনে সময়মতো কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারায় তার দ্বিতীয়বারও সর্বনাশ হয়। পচে নষ্ট হয়ে যায় সব বেগুন। সরজমিনে কৃষক আবদুর রহিমের বেগুন ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় গাছেই পচে আছে সব বেগুন, কিছু মাটিতে পড়ে পচে মিশে গিয়েছে। কৃষক আব্দুর রহিম জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিক্রয়ের মতো বেগুন আসা শুরু করে। তখন বাজারে দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা। ওই দরে বেগুন বিক্রি করে তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরিই পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। লকডাউনের কারণে মাঝে মাঝে ক্রেতা না থাকায় বাজারে নেয়া বেগুন বাজারেই ফেলে আসতে হতো। লকডাউনের মাঝামাঝি দাম বাড়লেও তখন ক্ষেতে বিক্রির মতো বেগুন ছিল না। টাকার অভাবে যত্ন না নিতে পারায় পোকার আক্রমণ হতো এবং পচে যেতো। সময়মতো পরিচর্যা করতে পারলে সপ্তাহে ৪০-৫০ মণ বেগুন বিক্রি করা যেতো প্রায় ৪-৫ মাস অবধি। কিন্তু বাজারে দাম না পাওয়ায় এবং করোনা সংকটে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোথাও থেকে কোনো অর্থ সাহায্য নিতে পারেননি। লকডাউন শেষে সব কিছু খুলে দেয়া হলেও ওইসব এনজিও যাদের থেকে ঋণ নিয়ে বাগান করেছিলেন তারা কিস্তির জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে। অন্য কোনো রোজগারের পথ না থাকায় স্ত্রী এবং দুই মেয়ের সংসার নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি তাকে অর্জন করতেই হবে এমন মনোবল তিনি নিজের মধ্যে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আব্দুর রহিম জানান, ঘরের ধান বিক্রি করে আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার দেনা করে আবার অন্য সবজির বাগান করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি। ইতিমধ্যেই পচে যাওয়া বেগুন ক্ষেত ভেঙে সেখানে করলা, বরবটি, শিম এবং লাউ চাষের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
এ ছাড়াও ইসলামী ব্যাংক থেকে জমি বন্ধক দিয়ে ২ লাখ টাকা কৃষি ঋণ নিয়ে পূর্বের কিছু দেনা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু এনজিওগুলোর সাপ্তাহিক এবং মাসিক কিস্তির চাপ তিনি সামলাতে পারছেন না। ঋণের কিস্তি মাস ছয়েক স্থগিত করার আবদার নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে মানবজমিনের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি। আব্দুর রহিমের ধারণা তার অসহায়ত্বের কথা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তিনি ও তার মতো লোনি কৃষকদের কিস্তি স্থগিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।