টানাবৃষ্টি আর মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরে সড়ক, ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ ভেঙে জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকা। পাশাপাশি নতুন করে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ২০টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছে এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। তবে দ্রুত সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন জানায়, বৈরী আবহাওয়া এবং গত কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্মীপুরের নদ-নদীগুলোতে পানির চাপ বেড়েই চলেছে। হঠাৎ গত শুক্র ও শনিবার দু-দফার জোয়ারের পানির চাপে তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কের ৩০০ মিটার সড়ক ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে কয়েকটি এলাকায়। এতে করে জেলা-উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। একই অবস্থায় নবীগঞ্জ-চরলরেন্স সড়কের ব্রিজ ধসে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অন্যদিকে সদর উপজেলার বুড়িরঘাট এলাকায় ৫০০ মিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় কয়েকটি গ্রাম।
ফলে এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। ঘরের মালামাল, হাঁস-মুরগি, পুকুরের মাছ ও গবাদিপশু হারিয়ে এসব এলাকার মানুষ এখন দিশাহারা। স্থানীয়রা জানায়, এসব এলাকার একমাত্র যাতায়তের মাধ্যম এ সড়ক। পাশে জেলার সব চেয়ে বড় মাছের আড়ৎ মতিরহাটঘাট। এ হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত কয়েক হাজার মানুষের আসা যাওয়া ছিল। হঠাৎ এ সড়ক, পাশের ব্রিজ ও নদীর তীররক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে করে চরম দূর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে। দ্রুত যদি এসব সমস্যা সমাধান না করা হয়, তাহলে মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এসব এলাকার মানুষ।
চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান উল্যাহ হিরন বলেন, হঠাৎ পানির চাপে সড়ক, ব্রিজ ভেঙে বেশ কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়ে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পাশাপাশি জেলা-উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এরপর ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি ও দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে কমলনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পী বলেন, দ্রুত সড়ক সংস্কার ও ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য কাজ চলছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হবে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ত্রাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুর জেলার ৫ উপজেলায় প্রায় ৬৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৭ কিলোমিটার নদীগর্ভে বিলীন। এছাড়া আরো অর্ধশতাধিক পয়েন্ট অতি ঝূঁকিপূর্ণ। এতে করে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদী তীরের বাসিন্দারা।