কভিড-১৯ সংকটে যৌথ উদ্যোগ উভয় দেশের জন্য লাভজনক

কভিড-১৯ সংকটে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি উভয় দেশের কল্যাণ নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় এবং এটিতে উভয় দেশই লাভবান বলে মনে করেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। গতকাল এফআইসিসিআই আয়োজিত ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট: স্টেকহোল্ডারস ইন্টার?্যাকশন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এমনটি জানান তিনি। ওয়েবিনারের প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাশ।

শেখ ফজলে ফাহিম তার বক্তব্যে বলেন, এ সংকটের সময়ে এসে আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় বাণিজ্য ৯ বিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে। কভিড-১৯ বাস্তবতার কারণে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য যৌথ বিনিয়োগ দরকার। যেসব পণ্য ও সেবার কাঁচামাল ভারত থেকে এসে বাংলাদেশে পণ্য প্রস্তুত হয়ে পুনরায় ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে, সেসব পণ্য ও সেবার ভ্যালু চেইনেরই একটি অংশ। ফলে যৌথ বিনিয়োগের কৌশলটি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে।

হালকা প্রকৌশল (লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং) শিল্পের সম্ভাবনা যাচাই ও অনন্য উদ্যোগ বাস্তবায়ন, ভারত থেকে আসা কাঁচামাল ও বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কিত একটি ভ্যালু চেইন উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যকার মানবিক সহযোগিতার দীর্ঘ তালিকায় আরো একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, যদি পিছিয়ে যাওয়া পেমেন্ট সম্পর্কিত সংশোধিত বিধানটি কার্যকর হয়, তাহলে তা বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য রফতানি এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত ও ভারতের বাইরে পণ্য রফতানিতে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় ভ্যালু চেইন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তা কাটাতে এবং বিশ্ববাজারের দিকেও নজর দিতে সাহায্য করবে। এ সময় তিনি বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের কেনাকাটা সহজ করতে ভারতীয় ব্যাংকগুলো থেকে বিলম্বিত এলসি প্রদানের সুবিধা বিলের দিন থেকে আরো ২৪০ দিন বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান।

ওয়েবিনারে রিভা গাঙ্গুগুলি দাশ বলেন, দুই দেশই পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কতটুকু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা যাচাই করার জন্যই ভারতীয় রেলওয়ে ও বাংলাদেশ রেলওয়ে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ভারত আঞ্চলিক সহযোগিতাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে যাত্রী ও বাণিজ্যিক যানবাহনের ওপর শুল্ক কমানোর বিষয়ে চিন্তা করছে। এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ভারত সরকারকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন।

ওয়েবিনারে মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার প্রেসিডেন্ট (গ্রুপ পাবলিক অ্যাফেয়ার্স) মনোজ চোগ বলেন, উচ্চ আমদানি শুল্ক থাকার কারণে, বিশেষ করে যাত্রী ও বাণিজ্যিক যানবাহনগুলোর ক্ষেত্রে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বাংলাদেশের বাজারে এ ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে যথাযথ রিটেইল ফিন্যান্স কার্যকর করা দরকার।

দুই দেশের পণ্য চলাচল সহজ করতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের প্রচারের জন্য রুটের যে পরিবর্তনের কথা বলেন ভারতীয় ব্যবসায়ী মনোজ। তার জবাবে ফাহিম বলেন, যেহেতু খরচের কার্যকারিতার দিক থেকে কনভেনশনগুলো এরকমই রয়ে গেছে, তাই আমাদেরকে গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে ভাবতে হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাণিজ্যের জন্য সেরা পথ হলো জলপথ। তার পরই রয়েছে রেলওয়ে। অবশ্যই যাত্রীবাহী যানবাহনের মাধ্যমে যেসব পণ্য ও পরিষেবা এরই মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করে, সে বিষয়েও যত দ্রুত সম্ভব এ রুটগুলো বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।

ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসি) ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মানিষ সিংহলের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে এফআইসিসি সেক্রেটারি জেনারেল দিলীপ চেনয় ও ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট আবদুল মাতলুব আহ্মাদ, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংকিং গ্রুপ এসবিআইয়ের ডিএমডি ভেঙ্কট নাগেশ্বর সি এবং সিএনএইচ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর (ইন্টারন্যাশনাল) অশোক অনন্তরামনও এই ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *