নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) পরিস্থিতিতে বিদ্যমান কর্মসংস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অর্থনীতির প্রাণশক্তি হিসেবে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গতকাল ‘কভিড-১৯ অর্থনৈতিক সংকট এবং বাংলাদেশের এসএমই শিল্প খাত’ শীর্ষক ভার্চুয়াল এক সংলাপে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
করোনা সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ, বিল্ড এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের যৌথ উদ্যোগে গঠিত পলিসি ডেভেলপমেন্ট প্লাটফর্ম রিসারজেন্ট বাংলাদেশ এ সংলাপের আয়োজন করে। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মনজুর হোসেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম, উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না, তরঙ্গের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর ইয়াসমিন, সাবেক মুখ্য সচিব ও পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম, ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, আসিফ ইব্রাহিম ও ব্যারিস্টার নিহাদ কবির অংশ নেন। সংলাপে খাতসংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো তুলে ধরেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শামস মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার করোনা পরিস্থিতিতেও জীবন-জীবিকা সচল রাখতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং শিল্পায়ন চালু রাখার বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি বিদেশ ফেরত জনশক্তিকে উৎপাদনশীল এসএমই খাতে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনার সুবিধা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ে মনিটরিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা কাজ শুরু করেছে।
করোনার ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদেশী উৎপাদনমুখী শিল্প-কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এটি দেশীয় এসএমই খাতের জন্য নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এসএমই শিল্পোদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা কামনা করি। আর যৌক্তিক সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের সুরক্ষায় ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের বিষয়ে সংলাপে অংশ নেয়া বক্তারা বলেন, অতি দ্রুততার সঙ্গে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও ব্যাংকিং জটিলতার কারণে এসএমই শিল্পোদ্যোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না।
এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রণোদনার সুবিধা দেয়ায় অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে গড়ে ওঠা বিপুল পরিমাণ শিল্প ও ব্যবসা উদ্যোগের জন্য ঘোষিত প্যাকেজের সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। তারা ব্যাংকিং চ্যানেলের পাশাপাশি মাইক্রো-ফিন্যান্সিং ইনস্টিটিউটসহ নন-ব্যাংকিং সেক্টরের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের অপ্রাতিষ্ঠানিক, কুটির, ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসার জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা সুবিধা দেয়ার দাবি জানান।
সংলাপে অন্যদের মধ্যে আরো অংশ নেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম, নারী শিল্পোদ্যোক্তা রুবিনা হোসেন, হুমায়রা চৌধুরীসহ এসএমই খাতের শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী নেতা ও উন্নয়ন গবেষকরা।