হালকা প্রকৌশল শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে

সরকার চলতি বছরকে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বা হালকা প্রকৌশলের উন্নয়নের বছর হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারীর কারণে বর্তমানে এ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প এবং এ-সংশ্লিষ্ট ভেন্ডরদের উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর পরও এ শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বামা) আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন আলোচকরা। কভিড-১৯-এর ফলে সৃষ্ট সংকটের প্রেক্ষাপটে প্রথমবার অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বামা।

বামা বাংলাদেশের যানবাহন খাতের পুরোটা নিয়েই কাজ করে। দুই চাকা, তিন চাকা, চার চাকা—বাস, ট্রাক মিনিবাস ছাড়াও আর্টিকিউলিটেড যানবাহন, বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটি। বামা আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বামার সদ্য সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান, বামার সহসভাপতি এবং ইফাদ অটোস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসকীন আহমেদ এবং বামার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহানা রউফ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, বর্তমান সরকারের শিল্পবান্ধব নীতিমালা এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনার আলোকে প্রদত্ত বিভিন্ন সরকারি প্রণোদনা ও নীতিসহায়তার কারণে দেশের মোটরসাইকেল শিল্প গত ১০ বছরে আমদানিনির্ভর খাত থেকে দেশীয় উৎপাদননির্ভর শিল্প খাতে পরিণত হয়েছে।

রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান সভাপতি হাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ মোটরসাইকেল ব্যবহূত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় চার লাখ মোটরসাইকেল বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রাইড-শেয়ারিং বা ভাড়ার কাজে ব্যবহূত হচ্ছে। দেশীয় মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে এরই মধ্যে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। দেশের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত মোটরসাইকেল দিয়ে পূরণ হচ্ছে। দেশীয় মোটরসাইকেল এরই মধ্যে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। মোটরসাইকেলের কম্পোনেন্ট (যন্ত্রাংশ ও আনুষঙ্গিক উপকরণ) তৈরি করার জন্য দেশে বেশকিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মোটরসাইকেল শিল্পের উন্নয়ন, বিকাশ ও প্রবৃদ্ধির জন্য সরকার এরই মধ্যে মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৮ ঘোষণা করেছে, যেখানে মোটরসাইকেল শিল্পের দেশীয় উৎপাদন ও ভেন্ডর উন্নয়ন কার্যক্রমের দিকনির্দেশনা রয়েছে। এ শিল্পের টেকসই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে সরকার এরই মধ্যে ২০২৫ সাল নাগাদ দেশের জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান ২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং ২০২৭ সাল নাগাদ এ দেশে প্রতি বছর ১৫ লাখ মোটরসাইকেল দেশীয়ভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশের প্রতিটি সমৃদ্ধ শিল্প-কারখানার কার্যক্রম বর্তমানে চার লাখ ট্রাক দিয়ে পরিবেশিত হয়। যেখানে ৩০ লাখেরও অধিক মানুষ সরাসরি বাণিজ্যিক পরিবহন কর্মকাণ্ডে জড়িত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আমাদের জাতির উন্নয়নে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো আরএমজি খাত। এ খাতের আমদানি-রফতানি লজিস্টিকের ৯০ শতাংশ বাণিজ্যিক ট্রাকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। একইভাবে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের সব ধরনের ভৌত অবকাঠামো এবং স্থাপনা নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাণিজ্যিক ট্রাক দিয়ে পরিচালিত হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *