সুজিত সরকারের নতুন চলচ্চিত্র ‘গুলাবো সিতাবো’। লক্ষ্মৌয়ের প্রবীণ জমিদার মির্জা এবং তার তরুণ ভাড়াটে বাঙ্কের কলহকে ঘিরে ছবিটি নির্মিত। এতে জমিদার মির্জা চরিত্রে অমিতাভ বচ্চন ও বাঙ্কে চরিত্রে আয়ুষ্মান খুরানা অভিনয় করেছেন। তাদের ঝগড়ার মূল বিষয় হলো মির্জার পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি, যেখানে বাঙ্কে থাকে কিন্তু ভাড়া দেয় না। তাদের এ লড়াইয়ে যোগদানকারীর একজন সরকারির কর্মকর্তা (বিজয় রাজ), অন্যজন আইনজীবী (ব্রিজেন্দ্র কালা)। ছবিটি ১২ জুন অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পাবে।
ভিকি ডোনার (২০১২), পিকু (২০১৬) ও অক্টোবর (২০১৮) ছবির পর ‘গুলাবো সিতাবো’ জুহি চতুর্বেদী রচিত সুজিত সরকারের চতুর্থ চলচ্চিত্র। ছবিটি নির্মাণের ধারণা প্রসঙ্গে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ইন-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন নির্মাতা। বলেছেন, এ ছবি তৈরির ধারণা তার এবং চতুর্বেদী দুজনের আলোচনার মধ্য দিয়ে এসেছে। মির্জা ও বাঙ্কের মতো যারা ‘দিন আনে দিন খায়’ অবস্থায় বেঁচে আছেন, তারা তাদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তারা জীবনের সঙ্গে লড়াই করে চলেন। ‘পিকু ছবির মধ্যখানে আমি যেমন একটা ক্যামেরা রেখেছি এবং পুরো বিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করেছি, এখানেও আমরা তাই করেছি।’—সরকার বলেন। তিনি আরো যোগ করেন, ‘এ মুহূর্তে ছবিটি সম্পর্কে বলতে পারি যে, এই প্রথমবার আমি ব্যঙ্গ করার চেষ্টা করেছি।’
ছবির শুটিং প্রথমে দিল্লিতে নির্ধারিত হয়েছিল, কিন্তু শেষ অবধি লক্ষ্মনৌতে চলে যান তারা। যেখানে শৈশবে চতুর্বেদী বেড়ে উঠেছিলেন। ‘পুরনো দিল্লি পুরনো লক্ষ্মনৌয়ের থেকে তেমন আলাদা নয়’—সুজিত তা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘চাঁদনী চক, দিল্লি গেট ও জামা মসজিদের মতো স্থানগুলোকে পুরনো বিশ্বের আকর্ষণ বলা হয়। এগুলোর সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে লক্ষ্মনৌয়ের হযরতগঞ্জ ও চক এলাকার। সেখানেই ছবির শুটিং করা হয়েছে।’
ছবির নাম উত্তর প্রদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পাপেট শো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রাখা হয়েছে। পুরনো গল্প, জরাজীর্ণ সিতাবো ও তরুণ উদ্যমী গুলাবোকে ঘিরে শোগুলো তৈরি হয়। এ দুজন কখনো হয় ভগ্নিপতি, নয়তো প্রতিদ্বন্দ্বী স্ত্রী হয় এবং স্থানীয় হাস্যরসের মাধ্যমে একে অন্যকে অপমান করে থাকে।
নির্মাতার ভাষ্যে, ‘ছবিটি তৈরির সময় আমরা পুতুলগুলো থেকে গুলাবো-সিতাবোর রূপটি পেয়েছিলাম এবং তখনই গল্পের জন্য এটা একটা ভালো রূপক হতে পারে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিই।’
‘গুলাবো সিতাবো’ অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে নির্মাতা সরকারের পুনর্মিলন ঘটিয়েছে। ‘শুবাইট’ (অপ্রকাশিত) ও ‘পিকুু ছবিতে অমিতাভকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সরকার। এদিকে আয়ুষ্মান খুরানার বলিউড যাত্রা শুরুই হয়েছিল সরকারের হিট ছবি ভিকি ডোনারের মাধ্যমে।
‘আমরা সবাই জানি যে অমিতাভ বচ্চন নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পছন্দ করেন। ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই মেকআপ ধরে রাখা খুব কঠিন ছিল। তবে এর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, আমি চাইনি এ ছবিতে মানুষ অমিতাভ বচ্চনকে দেখুক। আমি চেয়েছিলাম মানুষ কেবল মির্জাকে দেখবে।’—সরকার বলেন। একটা লম্বা নাক, হেলে পড়া শরীর ও মাথায় পাগড়ি বচ্চনকে মির্জার স্বতন্ত্র চেহারা এনে দিতে সাহায্য করেছে।
ছবির শুটিং নিয়ে সরকার বলেন, ‘কাজটি
খুব সুসংগঠিতভাবে করা হয়েছে। তবে অমিতাভ বচ্চনের মতো একজন ব্যক্তিত্বের সামনে নিজের ভূমিকায় আসতে খুরানা কিছুটা সময় নিয়েছিলেন, বিশেষত শ্লেষভরা জবাব দেয়ার সময়।’