আমি আসলে চলচ্চিত্রের মানুষ

কৃষ্ণকলি ইসলাম পরিচালিত প্রথম তথ্যচিত্র ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি)’ কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৩তম আসরে নির্বাচিত হয়েছে। কান আসরের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মের ‘কান ডকস’-এ অংশ নেবে তথ্যচিত্রটি। মার্শে দ্যু ফিল্মের ওয়েবসাইটে ‘স্পটলাইটেড প্রজেক্ট’ হিসেবে বিভিন্ন দেশের ১৪টি চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশী প্রকল্প ‘এনওসি’। সম্প্রতি এ নিয়ে টকিজের মুখোমুখি হয়েছিলেন কৃষ্ণকলি। আলাপ করেছেন রাইসা জান্নাত

সুসংবাদটি শোনার পর থেকে কেমন অনুভূতি কাজ করছে?

অনেক চাপ বোধ হচ্ছে। যখন কোনো কাজের স্বীকৃতি আসে তখন দায়িত্ববোধ বেড়ে যায়। অনেক বড় দায়িত্বের মধ্যে পড়ে গেলাম এখন।

তথ্যচিত্রটি নির্মাণের কাজ কবে শুরু করেছিলেন?

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আমার ফাইনাল শুটিং এখনো শুরু হয়নি। আমরা ভিডিও রিসার্চ করেছি। এটা দিয়েই অ্যাপ্লাই করেছিলাম। প্রথমে ঢাকা ডক ল্যাব, সেখান থেকে ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জিং ফিল্ম ট্যালেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে (আইইএফটিএ), তারপর মার্শে দ্যুতে সরাসরি নির্বাচিত হয়।

আপনি তো সংগীতের মানুষ। চলচ্চিত্র নির্মাণের ভাবনাটা কবে মাথায় আসে?

আমি আসলে চলচ্চিত্রের মানুষ। ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্র দেখতাম। সিদ্ধান্ত নিই বড় হয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করব। কখনই বলিনি বড় হয়ে গান করতে চাই। গান গাওয়াটা রোজকার বিষয় বলেই জানতাম। এর মধ্যেই আবার কখন লিখতে শুরু করি। একটা সময় এগুলোই আবার গেয়ে ফেলি। আসলে গান নিয়ে আলাদা করে ভাবিনি কখনো। তবে একটা সময়ে গিয়ে বেশ দায়বধ্যতা বোধ করেছি। চলচ্চিত্র বানাব, সে ভাবনা নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু শুরুতে খুব বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। নিজের একার কাজ বলতে যা বোঝায় সেটা শুরু করেছি ২০০৬ সালে। ‘বাংলার বাংলা বলি’ নামে আট পর্বের একটি অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছিলাম চ্যানেল ওয়ানের জন্য। এর আগে একেবারে নিজের বলতে কোনো কাজ ছিল না। যাদের সঙ্গে কাজ করেছি সেখানে অনেকটা ভিকটিমও ছিলাম বলা চলে। তো নানা রকম বাজে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি।

নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র বেছে নেয়ার কারণ?

চলচ্চিত্রের নানা ভাষার মধ্যে প্রামাণ্য ভাষা একটি। প্রামাণ্য ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়টি ফিকশনের চেয়ে আমার কাছে বেশি আগ্রহের মনে হয়েছে। তবে কখনো ফিকশন নির্মাণ করব না তাও নয়। আবার বানাতেই হবে এমনটাও নয়।

ছবির ট্রেইলারে সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে সিঙ্গেল মায়েদের জীবন সংগ্রামের কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এ ধরনের বিষয় বাছাইয়ের পেছনে বিশেষ কোনো কারণ?

এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টাকে যখন উপলব্ধি করতে শুরু করি তখন মনে হয়েছে, এ সমস্যা তো আমার একার না। এই অবস্থাটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বহু রকম জায়গা থেকেই বিশ্রীভাবে টিকে আছে, যার একটা অংশ হচ্ছে এ চলচ্চিত্রের বিষয়। পুরো প্রামাণ্য চলচ্চিত্রে নারীর একটা বিশেষ সংগ্রামকে তুলে ধরা হবে। ব্যক্তিগত ঘটনা ছাড়াও আরো কত জায়গায়, কতভাবে সন্তান ও মায়েরা ভুক্তভোগী সেটা দেখার প্রয়াস থেকেই চলচ্চিত্রটি বানানোর সিদ্ধান্ত নিই। এ কাজে আমাকে অনেকেই সহযোগিতা করছেন। দেশে প্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন ডক ল্যাবের সেক্রেটারি তারেক আহমেদ। আর সামিয়া রহমান, যিনি আইইএফটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে আছেন, তিনি সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। আইইএফটিও আমাকে ভীষণভাবে সহযোগিতা করে চলেছে। ২২ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত খুব সুন্দরভাবে অনলাইনে সেমিনার করা, ওয়েবিনার মেইনটেইনসহ সবখানে যেন সম্পৃক্ত থাকতে পারি সেগুলো নিশ্চিত করছে।

এ নির্দিষ্ট বিষয়টি নিশ্চয়ই আপনাকে অনুপ্রাণিত করছে? পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান কি?

অবশ্যই। একটা কাজ ঠিকঠাকভাবে শেষ করতে পারলে আরেকটা কাজের স্বপ্ন আপনাআপনিই তৈরি হয়ে যায়। আগে এ কাজটা মনোযোগ দিয়ে শেষ করতে চাই। যেমনটা ভাবছি তেমন আশা রেখেই শেষ করতে চাই। মানুষ যেমন টিকিট কেটে প্রেক্ষাগৃহে ফিকশন দেখতে যায়, তেমনি আমিও আশা করছি এ ছবিও মানুষ টিকিট কেটে প্রেক্ষাগহে গিয়ে দেখবে। মানুষের ভাবনা হলো ফিকশন ছবি টিকিট কেটে দেখতে হয়, প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নয়। আমি হয়তো একা এ চিন্তার পরিবর্তন করতে পারব না। কিন্তু আমার এ আকাঙ্ক্ষা থেকে হয়তো সামনের দিনের গল্পটা বদলাতে পারে। আবার নাও পারে। তবে চেষ্টা করে দেখতে তো সমস্যা নেই।

একটু অন্য প্রসঙ্গে যাব। গৃহবন্দি হয়েই আছেন নিশ্চয়?

অনেক দিন ধরেই ঘরবন্দি আছি। ঘরবন্দি থাকতে অসুবিধা হচ্ছে না। আসলে অসুবিধা বলতে আর্থিকভাবে সারা পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে আছে সেটার একটা মানসিক চাপ কাজ করছে।

বাড়িতে কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন?

কয়েক দিন আগে আমরা একটা নতুন গান প্রকাশ করেছি। আমার ইউটিউব চ্যানেলে। গানটার নাম ‘প্রাকৃত হয়ে বাঁচি’। এই গান, গানের মিউজিক ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সবাই মিলে কাজ করতে গিয়ে যেটা হয় বারবার কাজে বসতে হয়। কারণ এখন তো সবকিছুই অনলাইনে হচ্ছে। গত দুই মাস আমি ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম এই গান ও ডকুমেন্টারি প্রজেক্ট নিয়ে।

আমি এখানে কিছু বিষয় যুক্ত করতে চাই। প্রথমত, আমরা গান করছি। আর গানের জন্যই মানুষ আমাকে চেনে। আমাদের চ্যানেলগুলো যদি সবাই সাবস্ক্রাইব করে তাহলে আরো সমৃদ্ধ হবে। যদি সেখান থেকে অর্থ উপার্জন হয় তাহলে আমরা পরবর্তী কাজের জন্য আরো অনুপ্রাণিত হব। সাবস্ক্রিবশনটা না পেলে মনে হবে আমরা স্বীকৃতিও পাচ্ছি না, আর প্রয়োজনও নেই হয়তো মানুষের। এতে কাজের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল বা অন্য সবকিছু থেকে যদি রাজস্ব আনার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমরা দেশের টাকা দেশেই রাখতে পারব।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *