আমরা এখনো গুণীর কদর করতে শিখিনি

২০০৯ লাক্স-চ্যানেল আই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মিডিয়ায় পথচলা; অভিনয়ে আসার আগে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন—তিনি উর্মিলা শ্রাবন্তী কর। বিজ্ঞাপন, নাটক, চলচ্চিত্রে নিজের অভিনয় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। কভিডের এ সময়ে এসে কী নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি? জানিয়েছেন বণিক বার্তাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে। আলাপ করেছেন কুদরত উল্লাহ

শুটিংয়ের ব্যস্ততা কেমন?

পরিস্থিতি বিবেচনা করে শুটিংয়ে খুব বেশি একটা যাওয়া হচ্ছে না। আগামীকাল ঈদের একটা সিঙ্গেল নাটকের শুটিং আছে।

সিঙ্গেল নাটকে আপনার চরিত্রটি কেমন?

চরিত্রটা একটু ভিন্নই মনে হয়েছে। গ্রামের একটি মেয়ে, যার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণাই নেই। কিন্তু বিয়ের পর শহরে এসে সে আশপাশের ভাবিদের পরামর্শে সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকটিভ হয়। তারপর নানা মন্তব্য করে একটা বিপদের মধ্যে পড়ে যায়। এমনই একটা গল্প। খুবই সামাজিক। মূলত কারো কথার ওপর ভিত্তি করেই আমরা নানা ধরনের মন্তব্য করে বসে থাকি সোস্যাল মিডিয়ায়। এর সত্যতা আসলে আমরা না জেনেই করি। এর প্রভাব কতটা ভয়ংকর হতে পারে এটাই নাটকের মূল মেসেজ ।

দেশে তো কভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার দিনকে দিন বাড়ছেই। সেক্ষেত্রে শুটিংয়ে কতটা নিরাপদ বোধ করছেন?

আসলে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তো চলার চেষ্টা করছি। শুটিং টিমের সবাইও সচেতন হয়েছে। অনেক নিরাপদ থেকেই শুটিংয়ে যাচ্ছি। এখন কথা হচ্ছে, যদি একেবারেই শুটিং অফ করে দিই, তাহলে যেসব নির্মাতাকে শুটিং ডেট দিয়ে রেখেছিলাম তারা তো ফেঁসে যাবেন এবং আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতি হবে। এটা নিশ্চয়ই কাম্য নয়। তাই সব ভেবেচিন্তেই শুটিং করছি।

শুটিং যদি নিয়মিত না করেন সেক্ষেত্রে কী হতে পারে?

আমার হয়তো খুব বেশি কিছু হবে না। কিন্তু আমি যদি শুটিংয়ে না যাই, একজন লাইট ম্যান থেকে প্রডাকশনের পুরো ইউনিটের সবারই এ শুটিং বাবদ আয় থেকে সংশ্লিষ্টদের পরিবার চলে। সেজন্য তাদের কথা চিন্তা করে হলেও শুটিংটা করছি। কারণ তাদেরও পরিবার আছে। শুটিং যদি বন্ধ হয়েই যায় বা আমি অভিনয় না করি তাহলে সংশ্লিষ্ট অনেকেই সমস্যায় পড়বেন।

আপনি তো ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কি রাজনীতিতে আরো পাকাপোক্ত হবেন?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রলীগের হয়ে কাজ করেছি। এটা আমার ভালোবাসার জায়গা। যদি ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু অপশন আসে তাহলে অবশ্যই রাজনীতি করব। এখন আওয়ামী লীগের উপমহিলা কমিটির হয়ে কাজ করছি। অভিনয়ের বাইরে যতটুকু করব ততটুকু হচ্ছে রাজনীতি। তবে যদি রাজনীতিতে তেমন কোনো পদ না-ও পাই তাতেও আমার কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ আমি রাজনীতি ও অভিনয় দুটোই ভালোবাসি এবং ভালোবেসেই সব করি।

অভিনয়ের জন্য তো বিভিন্ন চরিত্র করতেই হয়। সেক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের কোনো চরিত্রে কি আপনাকে দেখতে পাওয়া যাবে?

এটা তো আসলে যারা স্ক্রিপ্ট লেখেন বা নির্মাণ করেন তারাই ভালো বলতে পারবেন যে আমাকে দিয়ে কোন চরিত্রটি পর্দায় ভালো মানাবে। অভিনেত্রীর জায়গা থেকে তো আসলে ভিন্ন চরিত্র নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা থাকেই। নয়তো একঘেয়েমি লাগে।

সম্প্রতি এমন কোন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করেছেন?

একটা চরিত্রের কথা বলতেই পারি। যেটা আগে করা হয়নি। সেটা হচ্ছে বেদের মেয়ের চরিত্র। শুটিংয়ের বাইরে একটা মজার তথ্য দিচ্ছি। নাটকের দৃশ্য ধারণের সময় সত্যিকারের বাইদানিরা ছিল। তাদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। এখন ঘটনা হচ্ছে, আমার সাপ বলুন কিংবা কুকুর এদের বিষয়ে একটা ভয় কাজ করে। কিন্তু যখন শুটিং হচ্ছে তখন প্রচুর মানুষ ছিল যারা একটু অন্যভাবে বাইদানিদের দেখে। এটা আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে। যার কারণে নিজের ভয়টা ভেঙে সাপ কীভাবে ধরতে হয় সেটা বাইদানিদের সঙ্গে কথা বলে শিখে নিলাম। তারপর বুঝলাম, আসলে তাদের সাপের তো কোনো বিষ নেই। আমার ভয়টাও কেটে গেছে। আর যারা অন্য চোখে দেখছিল তারাও আমার এ কাজ দেখে মুখটা বন্ধ করে ফেলেছিল। এটাও একটা প্রফেশন এবং আদিকাল থেকেই এটা চলে আসছে।

এখন তো প্রায় সবাই ওটিটির দিকে ঝুঁকছে। আপনিও যাচ্ছেন কি?

বেশকিছু স্ক্রিপ্ট এলেও আমার চরিত্রগুলো পছন্দ হয়নি। যার কারণে এখনো ওটিটিতে যাওয়া হয়নি। তবে যদি ভালো মানের স্ক্রিপ্ট আসে তাহলে অবশ্যই যাব।

কভিড তো মিডিয়ার অনেক গুণী মানুষকে কেড়ে নিল। এ বিষয়ে কী বলবেন?

একটা প্রবাদ আছে, গুণী মানুষের কদর আমরা করতে শিখিনি। বেঁচে থাকতে মানুষটি কেমন আছে সে খবর আমরা নিতে শিখিনি। আমাদের দেশে গুণী মানুষের প্রয়াণ হওয়ার পর আমরা একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়ি শোকাহত হয়ে। অথচ সেই মানুষটা মৃত্যুর আগে হয়তো অনেককেই দেখতে চেয়েছিল, পাশে চেয়েছিল। কিন্তু কেউ তার পাশে থাকেনি। গুণীর কদর আমরা এখনো করতে শিখিনি। আদৌ শিখব কিনা সেটাও বলতে পারছি না।

মিডিয়ায় তো প্রায় সবাই সোস্যাল ওয়ার্কিং করছে। আপনিও কি করেন?

আমি আসলে ব্যক্তিগতভাবে আমার আশপাশের মানুষদের খেয়াল রাখছি। যতটুকু পারি তাদের হেল্প করছি। এর বাইরে ব্যক্তিগতভাবে কোনো মাধ্যমে জড়িত নই। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে, যে মানুষ আমার বাসায় বাজার পৌঁছে দেয়, তার খোঁজ নেয়া দরকার। যে দোকান থেকে আমি আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনি, সে কেমন আছে। তার খোঁজ নিই। আমার শুটিং টিমের কারা বিপদে আছে তাদের খবর রাখি আমি। আমার পাশের বাসার মানুষজন কে না খেয়ে আছে তার খবর রাখি আমি। আমার ড্রাইভার যে কিনা আমাকে প্রতিনিয়ত পৌঁছে দেয় আমার গন্তব্যে, আমি তার খবর রাখার চেষ্টা করি এবং তাদের সবার প্রবলেম সলভ করার চেষ্টা করি। এটাই আমার বর্তমান সোস্যাল ওয়ার্ক।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *