আইফোন উৎপাদনে ভারতকে উপযুক্ত মনে করছে অ্যাপল?

পূর্বাভাস ছিল, আইফোন নির্মাতা অ্যাপল উৎপাদন সক্ষমতার এক-পঞ্চমাংশ চীন থেকে ভারতে সরিয়ে নিচ্ছে। গত মে মাসে এমন তথ্য জানা যায়। দেশটিতে সাশ্রয়ী এবং আইফোনের পুরনো সংস্করণগুলোর উৎপাদন শুরু হয়েছিল আগেই। এবার চীনের পরিবর্তে ভারতের চেন্নাইয়ে অবস্থিত ফক্সকনের কারখানায় আইফোনের হাই-এন্ড সংস্করণ ‘আইফোন ১১’-এর উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টটি। বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, অ্যাপল আইফোন উৎপাদনের জন্য চীনের পরিবর্তে ভারতকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে তা আবারো স্পষ্ট হলো। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।

গত শুক্রবার এক টুইটে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী শ্রী পিযুস গোয়াল জানান, ভারতে উৎপাদনের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি! অ্যাপল ভারতে আইফোন ১১ সংযোজন শুরু করেছে। দেশে প্রথমবারের মতো আইফোনের শীর্ষ মডেল সংযোজনের কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি, যা ভারতের উৎপাদন খাতকে এগিয়ে নেবে।

২০১৭ সালে ভারতের বেঙ্গালুরুর কারখানায় আইফোনের ২০১৬ সালের সাশ্রয়ী ‘এসই মডেল’ সংযোজনের কাজ শুরু করেছিল অ্যাপল। গত বছর থেকে দেশটিতে আইফোনের আরেক সাশ্রয়ী সংস্করণ ‘আইফোন এক্সআর’ সংযোজনের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি ভারতে চলতি

বছরের জন্য হালনাগাদ ‘আইফোন এসই’ মডেল সংযোজনের পরিকল্পনা রয়েছে অ্যাপলের।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরুতে নিজেদের ভারতীয় কারখানার জন্য ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল অ্যাপলের প্রধান চুক্তিভিত্তিক পণ্য সরবরাহকারী ফক্সকন। তাইওয়ানভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান এতদিন চীনে স্থাপিত নিজস্ব কারখানায় সিংহভাগ আইফোন সংযোজন ও উৎপাদনের কাজ করে আসছিল। অ্যাপলের দ্বিতীয় প্রধান সরবরাহকারী পেগাট্রনও ভারতে বিনিয়োগের প্রস্তুতি নিয়েছে।

ভারত সরকার স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনকে উৎসাহিত করছে। এরই অংশ হিসেবে প্রডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ (পিএলআই) বা স্থানীয়ভাবে পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পিএলআই সুবিধার আওতায় অনেক প্রতিষ্ঠানই ডিভাইস উৎপাদন এবং আরঅ্যান্ডডি কার্যক্রম চীন থেকে ভারতে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সুবিধার আওতায় অ্যাপল নিজেদের পণ্য উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ ভারতে স্থানান্তরে কাজ শুরু করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু অ্যাপল নয়; চলতি বছরেই চীন থেকে ভারতে ডিভাইস উৎপাদন কার্যক্রম স্থানান্তরের জন্য ৮০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে লাভা। এছাড়া আগামী পাঁচ বছর ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠানটি ৮০০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে। লাভা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান হলেও এতদিন চীনের কারখানায় ডিভাইস উৎপাদন করে আসছিল।

এ বিষয়ে লাভার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হরি ওম রাই বলেন, আমরা খুবই আগ্রহের সঙ্গে আমাদের সম্পূর্ণ মোবাইল আরঅ্যান্ডডি, ডিজাইন ও উৎপাদন কার্যক্রম চীন থেকে স্বদেশে স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছি। আমরা আশা করছি পুরো প্রক্রিয়া ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হবে।

তিনি বলেন, ভারত সরকারের প্রণোদনার কারণে বৈশ্বিক বাজারে কার্যক্রম জোরদারে আমাদের যে উৎপাদন সক্ষমতার ঘাটতি ছিল তা পূরণ হবে। যে কারণে আমরা আমাদের সম্পূর্ণ কার্যক্রম ভারতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কার্যক্রম স্থানান্তর প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের ওপর নির্ভর করছে। পাশাপাশি আমাদের পণ্যের চাহিদা এবং বিশ্বজুড়ে আমরা কতটা বাজার দখলে সক্ষম হচ্ছি তার ওপরও নির্ভর করছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পণ্য উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ চীন থেকে ভারতে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে গত কয়েক মাসে অ্যাপলের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী এবং ভারত সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অ্যাপল পণ্য উৎপাদন সক্ষমতার একটি অংশ চীন থেকে ভারতে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে খুঁটিনাটি যাচাই-বাছাই করে দেখছে। ভারতে পণ্য উৎপাদন কার্যক্রমের আংশিক সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে স্থানীয় চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতাদের সহায়তায় দেশটিতে আগামী পাঁচ বছর বার্ষিক রাজস্ব আয় ৪ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।

খাতসংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, বাস্তবে এসব পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখলে অ্যাপল ভারতের বৃহৎ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং ভারত পরবর্তী স্মার্টফোন উৎপাদন হাব হয়ে উঠবে।

গত মে মাসে ভারত সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, আমরা আশা করছি অ্যাপল চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতা উইস্ট্রন ও ফক্সকনের মাধ্যমে রফতানির জন্য ভারতে ৪ হাজার কোটি ডলার মূল্যের স্মার্টফোন উৎপাদন করবে। ভারত সরকার স্থানীয়ভাবে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনকে উৎসাহিত করছে। যে কারণে ভারত সরকারের পিএলআই স্কিমের আওতায় লাভবান হবে জনপ্রিয় আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *