অবস্থান পোক্ত করেছে রাশিয়া ও ভিয়েতনাম

স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থা যত টেকসই হয়, ততই দেশগুলো শিল্প-কারখানা গড়ে তোলে। অবকাঠামো নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ বাড়ায়। ফলে দেশে দেশে বাড়ে ইস্পাতের চাহিদা। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি অনেকটাই স্থিতিশীল ও টেকসই ছিল। ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, ব্রাজিলের মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রগতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ফলে এসব দেশে বিকাশ ঘটেছে শিল্পের। চলছে বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প। বেড়েছে ইস্পাতের চাহিদাও। ক্রমবর্ধমান বাজার চাহিদার চাপ সামাল দিতে উৎপাদনকারী দেশগুলোও শিল্প ধাতুটির উৎপাদন বাড়ানোয় মনোযোগ দিয়েছে। প্রতি বছরই বাড়ছে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন। তবে এক্ষেত্রে রাশিয়া ও ভিয়েতনামের অর্জন বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় গত বছর দুটো দেশই এক ধাপ করে এগিয়ে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছে। খবর ডব্লিউএসএ।

ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউএসএ) সম্প্রতি একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে গত বছর অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশগুলোর ক্রমতালিকা বা র্যাংকিং উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় শীর্ষ ২০টি দেশের অবস্থান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শুধু রাশিয়া ও ভিয়েতনামের অবস্থান আগের বছরের তুলনায় একধাপ করে উন্নতি হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াকে পেছনে ফেলে রাশিয়া শীর্ষ পাঁচে উঠে এসেছে। আর শীর্ষ তালিকায় ভিয়েতনামের অবস্থান ১৪তম। দেশটি মেক্সিকোকে একধাপ পেছনে ফেলেছে। বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনকারীদের শীর্ষ তালিকায় বাকি দেশগুলো নিজেদের আগের অবস্থান ধরে রেখেছে।

ডব্লিউএসএর তথ্য অনুযায়ী, বরাবরের মতো গত বছরও ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশগুলোর বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় রয়েছে চীন। ২০১৯ সালে দেশটিতে সব মিলিয়ে ৯৯ কোটি ৬৩ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। আগের বছর দেশটিতে ৯২ কোটি টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। তালিকায় এর পরই ভারতের অবস্থান। গত বছর দেশটিতে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ১২ লাখ টন। ২০১৮ সালে ১০ কোটি ৯৩ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদনের মধ্য দিয়ে দেশটি প্রথমবারের মতো শিল্প ধাতুটির বৈশ্বিক উৎপাদনকারীদের তালিকায় জাপানকে টপকে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছিল।

গত বছরের তালিকায় তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালে জাপানে মোট ৯ কোটি ৯৩ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। আগের বছর দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৪৩ লাখ টন। অর্থাৎ, ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর জাপানে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমেছে। অন্যদিকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ৭৮ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৬৬ লাখ টন। তবে উৎপাদন কমলেও তালিকায় তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থান ধরে রেখেছে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র।

বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনকারীদের শীর্ষ তালিকায় পরিবর্তন চোখে পড়ে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে এসে। ৭ কোটি ২৫ লাখ টন ও ৭ কোটি ২১ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন করে ২০১৮ সালে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে ছিল যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়া। গত বছর অবস্থান পরিবর্তন করেছে দেশ দুটি। রাশিয়া পঞ্চম অবস্থানে উঠে এসেছে। উৎপাদন করেছে ৭ কোটি ১৯ লাখ টন ইস্পাত। আর ৭ কোটি ১৪ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া একধাপ নেমে শীর্ষ ৬-এ অবস্থান করছে।

তালিকায় পরের দুটি (সপ্তম ও অষ্টম) অবস্থান ধরে রেখেছে যথাক্রমে জার্মানি ও তুরস্ক। গত বছর জার্মানিতে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। তুরস্কে শিল্প ধাতুটির উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩৭ লাখ টনে। এ সময় ৩ কোটি ২২ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদনের মধ্য দিয়ে তালিকায় নবম অবস্থান ধরে রেখেছে ব্রাজিল। আর দশম অবস্থানে রয়েছে ইরান। গত বছর দেশটিতে সব মিলিয়ে ২ কোটি ৫৬ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে।

রাশিয়ার পাশাপাশি ভিয়েতনামও গত বছর একধাপ এগিয়ে ইস্পাত উৎপাদনকারীদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় ১৪তম অবস্থানে উঠে এসেছে। দেশটি মেক্সিকোকে একধাপ পেছনে ফেলেছে। এ সময় ভিয়েতনামে সব মিলিয়ে ২ কোটি ১ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। আগের বছর ভিয়েতনামে মোট ১ কোটি ৫৫ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছিল। অন্যদিকে ২০১৮ সালে মেক্সিকো ২ কোটি ২ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করেছিল। গত বছর দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ টনে।

বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনকারীদের শীর্ষ তালিকায় ভিয়েতনাম ও মেক্সিকোর আগে রয়েছে যথাক্রমে ইতালি (১১তম), তাইওয়ান (১২তম) এবং ইউক্রেন (১৩তম)। গত বছর ইতালিতে ২ কোটি ৩২ লাখ টন, তাইওয়ানে ২ কোটি ২০ লাখ টন ও ইউক্রেনে ২ কোটি ৮ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে।

ভিয়েতনাম ও মেক্সিকোর পর ইস্পাত উৎপাদনকারীদের বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষ ২০-এ রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স (১৬তম), স্পেন (১৭তম), কানাডা (১৮তম), পোল্যান্ড (১৯তম) ও সৌদি আরব (২০তম)। ২০১৯ সালে ফ্রান্স ১ কোটি ৪৪ লাখ টন ও স্পেনে যথাক্রমে ১ কোটি ৩৬ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে। এ সময় কানাডায় শিল্প ধাতুটির উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টনে। পোল্যান্ড ও সৌদি আরবে গত বছর যথাক্রমে ৯০ লাখ টন ও ৮২ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *