মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভেনিজুয়েলা-চীন বাণিজ্য অব্যাহত

বেশ আগে থেকেই ভেনিজুয়েলার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের আগস্টে এ বিষয়ে আরো কড়াকড়ি অবস্থান নেয় মার্কিন প্রশাসন। ওই সময় নিকোলাস মাদুরোর শাসনাধীন সমাজতান্ত্রিক ভেনিজুয়েলার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখলে যে কোনো দেশ বা কোম্পানিকে নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত করার হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পরও ভেনিজুয়েলা থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে চীন। শিপ ট্র্যাকিং ডাটা ও ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল কোম্পানি পিডিভিএসএর নথির ওপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

রয়টার্সের অনুসন্ধানে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উৎস গোপন রেখে ভেনিজুয়েলা থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে চীন। এক্ষেত্রে চীনের কোম্পানিগুলো রাশিয়ার জ্বালানি তেলের জায়ান্ট কোম্পানি রোজনেফতের সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি ইউনিটের সহায়তা নিয়েছে। এখান থেকে শিপ টু শিপ ট্রান্সফার বা জাহাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার চীনের সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করেছে।

রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে লাতিন আমেরিকার দেশটি থেকে ১৮টি ট্যাংকারের মাধ্যমে মোট ১ কোটি ৯৭ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে চীন।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল কোম্পানি চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিএনপিসি) ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেল খাতের অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা। ২০১৯ সালের আগস্টে পিডিভিএসএর ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও দুই কোম্পানির মধ্যে জ্বালানিটির আদান-প্রদান অব্যাহত ছিল। এ পরিস্থিতিতে পিডিভিএসএর সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ না করলে সিএনপিসির যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের হুমকি দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর অনেকটা বাধ্য হয়েই ভেনিজুয়েলা থেকে জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দেয় চীন। তবে রয়টার্সের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চলতি বছরও দুই দেশের মধ্যে পণ্যটির বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। তবে তার উৎস গোপন করে রিব্র্যান্ডেড করে আমদানি করেছে বেইজিংয়ের কোম্পানিগুলো। এ কাজে দেশটি রাশিয়ার রোজনেফতের সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইউনিটের সহায়তা নিয়ে থাকতে পারে।

এদিকে চলতি বছরের শুরুর দিকে নিকোলাস মাদুরোর সরকারের সব রাজস্ব প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবে এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে ভেনিজুয়েলার জ্বালানি রফতানি খাতে সহযোগিতার জন্য রাশিয়ার রোজনেফতের সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বাণিজ্য ইউনিটেরসহ মোট দুটি ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভেনিজুয়েলা থেকে চীনের জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়ে রোজনেফতের পক্ষ থেকে রয়টার্সকে জানানো হয়, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করেছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভেনিজুয়েলাবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইলিয়ট আব্রামস বলেন, নিষেধাজ্ঞা না মেনে চীনের জ্বালানি তেলের শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসন স্বতন্ত্র পদক্ষেপ নেবে।

উল্লেখ্য, রাজনৈতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালে ভেনিজুয়েলার ওপর প্রথমবারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সরকারি জ্বালানি তেল কোম্পানিকে এ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত করে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ভেনিজুয়েলার প্রধান রফতানি পণ্য। সমাজতান্ত্রিক দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি এ খাত। ফলে এ খাতের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে ভেনিজুয়েলায় অর্থনৈতিক সংকট আরো জোরালো হয়। এতে ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেলের অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা ভারত ও চীনসহ অন্য দেশগুলো পণ্যটির আমদানিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তবে নিষেধাজ্ঞার পরও দেশগুলো পণ্যটির আমদানি সীমিত পরিসরে অব্যাহত রেখেছিল।

তবে গত বছরের আগস্টে এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দেয় ওয়াশিংটন। এ সময় ভেনিজুয়েলার সঙ্গে বাণিজ্য চলমান রাখায় কিউবা এবং চীনের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। ফলে ভারত, রাশিয়া ও চীনসহ ভেনিজুয়েলার জ্বালানি তেলের অন্যান্য শীর্ষ ক্রেতা দেশগুলো ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে। এতে লাতিন আমেরিকার দেশটির জ্বালানি তেল রফতানিতে ধস নামে। হুমকিতে পড়ে যায় সামগ্রিক অর্থনীতি। বৈদেশিক আয় কমে যাওয়ায় খাতটিতে বিনিয়োগ সংকুচিত হতে থাকে। এর জের ধরে দেশটিতে পণ্যটির উত্তোলন নিম্নমুখী হতে শুরু করে। বর্তমানে অভ্যন্তরীণভাবেই চরম জ্বালানি সংকটে রয়েছে দেশটি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *