ভারতে কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা অ্যামনেস্টির

ব্যাংক হিসাব জব্দ ও কার্যক্রম চালিয়ে নিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ কেন্দ্র সরকারের প্রতিশোধমূলক কর্মতত্পরতার কারণে ভারতে কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল এ ঘোষণা দিয়েছে লন্ডনভিত্তিক এ মানবাধিকার সংগঠনটি। খবর এএফপি ও বিবিসি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ভারতে তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। সে কারণে সেদেশে তারা কর্মী ছাঁটাইয়ে বাধ্য হয়েছে। সব প্রচারণা ও গবেষণামূলক কাজ বন্ধ রয়েছে। সংগঠনটির রিসার্চ, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড পলিসি সংক্রান্ত জ্যেষ্ঠ পরিচালক রজত খোসলা বিবিসিকে বলেন, আমরা ভারতে নজিরবিহীন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি। ভারত সরকারের পদ্ধতিগত আক্রমণ, হুমকি ও হেনস্তার মুখে পড়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া।

অ্যামনেস্টির দাবি, বিভিন্ন সময়েই তারা ভারত সরকারের প্রতিশোধমূলক আচরণের শিকার হয়েছে। ২০১৬ সালের আগস্টে অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের হয়েছিল। তখন অভিযোগ করা হয়, সংগঠনটির একটি অনুষ্ঠানে ভারতবিরোধী স্লোগান দেয়া হয়েছে। তিন বছর পর অভিযোগ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন আদালত। ২০১৮ সালের অক্টোবরে বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত অ্যামনেস্টির কার্যালয়ে অভিযান চালায় ভারতের আর্থিক জালিয়াতি অনুসন্ধান সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এরপর অ্যামনেস্টির অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়। পরে আদালতের হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে তা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয় সংগঠনটি। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে সংগঠনটি জানায়, তাদের বেশ কয়েকজন দাতাকে চিঠি পাঠিয়েছে দেশটির আয়কর বিভাগ। একই বছরের শেষের দিকে আবারো অ্যামনেস্টির কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। তবে এ ধাপে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মামলার ভিত্তিতে অভিযানটি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই।

গত মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি দাবি করে, ফেব্রুয়ারিতে রাজধানী দিল্লিতে সংগঠিত হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে পুলিশ। তবে দিল্লি পুলিশ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেয়া সাক্ষাত্কারে এ অভিযোগকে ‘ভারসাম্যহীন, পক্ষপাতদুষ্ট ও বিদ্বেষপরায়ণ’ বলে আখ্যা দেয়। আগস্টের শুরুতে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়ার প্রথম বর্ষপূর্তিতে সব রাজনৈতিক বন্দি, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিকদের ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানায় অ্যামনেস্টি। উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা আবারো চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় তারা।

রজত খোসলা বলেন, এগুলো সব আমাদের মানবাধিকারসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত করছে। তদন্ত করতে গিয়ে আমরা যে প্রশ্নগুলো তুলছি, তার জবাব সরকার দিতে চাইছে না। তা দিল্লি দাঙ্গাসংক্রান্ত প্রশ্নই হোক কিংবা জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের কণ্ঠরোধের প্রশ্নই হোক।

এর আগে ২০০৯ সালেও ভারতে অ্যামনেস্টির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিদেশ থেকে তহবিল পাওয়া নিয়ে সংগঠনটিকে বারবার লাইসেন্স দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তা বন্ধ হয়ে যায়। তখন ভারতের শাসনক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস পার্টি। দেশটির বর্তমান বিজেপি সরকার এর আগে বলেছিল, বিদেশী তহবিল আইন লঙ্ঘন ইস্যুতে অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। একে একেবারেই মিথ্যা অভিযোগ বলে উল্লেখ করে খোসলা। তিনি বলেন, দেশের ও আন্তর্জাতিক আইনের সব বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সংগতি রেখেই অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়া পরিচালিত হয়। আমরা ৭০টিরও বেশি দেশে কাজ করছি এবং শুধু রাশিয়াতেই ২০১৬ সালে কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়েছে অ্যামনেস্টির।

এদিকে ভারতে অ্যামনেস্টির কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য জানায়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *