৪০ বিলিয়ন ডলারে এআরএম কিনছে এনভিডিয়া

ব্রিটিশ চিপ ডিজাইনার এআরএম হোল্ডিংস অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে এনভিডিয়া করপোরেশন। এ নিয়ে চুক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে প্রতিষ্ঠানটি। এআরএম অধিগ্রহণের জন্য প্যারেন্ট কোম্পানি জাপানভিত্তিক সফটব্যাংক গ্রুপ করপোরেশনকে ৪ হাজার কোটি ডলার (৪০ বিলিয়ন) পরিশোধ করবে এনভিডিয়া। বৈশ্বিক চিপ ইন্ডাস্ট্রিতে এ অধিগ্রহণ একটি জায়ান্ট কোম্পানি সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এনভিডিয়া এ অধিগ্রহণের মূল্য নগদ অর্থ ও শেয়ারের মাধ্যমে পরিশোধ করবে। আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে অধিগ্রহণসংক্রান্ত একটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এনভিডিয়া নিজেদের গ্রাফিকস চিপের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে পরিচিত। বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে ভিডিও গেম খেলার সুযোগ দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাফিকস চিপ। শুধু গ্রাফিকস চিপ নয়; আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি এবং ডাটা সেন্টারের জন্য চিপ তৈরি করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এআরএম হোল্ডিংসকে অধিগ্রহণের উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানটির চিপ ডিজাইন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে এআরএম হোল্ডিংস ফোন এবং ট্যাবলেট ডিভাইসের জন্য চিপ প্রযুক্তি সরবরাহ করে আসছে। পাশাপাশি অত্যাধুনিক সব গাড়ি, ডাটা সেন্টার এবং অন্যান্য ডিভাইসের জন্য প্রসেসর সরবরাহের কার্যক্রম জোরদার করেছে। এআরএম নিজে কোনো চিপ তৈরি করে না। বরং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ও ডিজাইন সরবরাহ করে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিপ তৈরিতে সহায়তা দিয়ে আসছে। এজন্য অবশ্য প্রতিষ্ঠানটিকে লাইসেন্স ফি পরিশোধ করতে হয়। বেশ আগে থেকেই এনভিডিয়ার সঙ্গেও ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এ প্রতিষ্ঠান। গত বছর এক ঘোষণায় এনভিডিয়া জানিয়েছিল, তারা সুপার কম্পিউটার তৈরির জন্য চিপ উন্নয়ন করছে, যা এআরএমের প্রসেসরের সঙ্গে কাজ করবে। এ সুপার কম্পিউটার জলবায়ু পরিবর্তন এবং পারমাণবিক অস্ত্র মডেলিংয়ে কাজ করবে বলে জানানো হয়।

২০১৬ সালে এআরএম হোল্ডিংসকে অধিগ্রহণ করেছিল সফটব্যাংক গ্রুপ করপোরেশন। এ অধিগ্রহণের জন্য প্রতিষ্ঠানটি তখন ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার পরিশোধ করেছিল, যা সফটব্যাংক গ্রুপ করপোরেশনের সবচেয়ে বড় অংকের বিনিয়োগ ছিল তখন। চিপ ডিজাইন প্রতিষ্ঠান হিসেবে এআরএমের সুনাম রয়েছে। সনি, অ্যাপল, স্যামসাং ও হুয়াওয়েসহ বিশ্বের প্রায় ৯৫ শতাংশ স্মার্টফোনে ব্যবহার হচ্ছে এআরএমের ডিজাইন করা চিপ।

এআরএম হোল্ডিংসের নিয়ন্ত্রণ সফটব্যাংকের কাছে গেলেও চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ক্যামব্রিজ থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। ওই সময় ধারণা করা হচ্ছিল সফটব্যাংকের বিনিয়োগ এবং নিয়ন্ত্রণে নতুন গতি পাবে এআরএম। আগামী পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানে কর্মীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হবে। কিন্তু বাস্তবে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। এখন বলা হচ্ছে, ব্যবসায় সুবিধা করতে না পেরেই এআরএমের মালিকানা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে সফটব্যাংক।

এআরএম অধিগ্রহণের পর সফটব্যাংকের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসাওশি সন বলেছিলেন, তারা ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি খাতে কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আইওটি নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে এআরএম বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি বৃহৎ গ্রাহক চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসায় সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছে এআরএম হোল্ডিংস, যা প্রতিষ্ঠানটিকে বেকায়দায় ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে হুয়াওয়ে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার বিধিনিষেধ আরো কড়াকড়ি করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা হয়েছে, মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে এমন অন্য দেশের প্রতিষ্ঠানও হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। এর ফলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মেনে হুয়াওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এআরএম।

এআরএম এরই মধ্যে কর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক করেছে। যদিও হুয়াওয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য করেনি এআরএম। সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের চিপের নকশায় মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তাই মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ও এ-সংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ তারা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করবে।

বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সিসিএস ইনসাইটের কর্মকর্তা জিওফ ব্লেবার বলেন, মার্কিন সরকার যদি দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এমন নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে, তাহলে হুয়াওয়ের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ‘অপূরণীয়’ ক্ষতি হবে। হুয়াওয়ের বেশির ভাগ চিপ এআরএমের প্রযুক্তি ব্যবহার করে নকশা করা হয়। নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজস্ব চিপ তৈরি থেকে সরে এসেছে হুয়াওয়ে। একই কারণে এআরএমের মতো হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা রয়েছে এমন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *