প্রযুক্তি খাতের আধিপত্যে মার্কিন-চীন দূরত্ব কমছে —এরিক শিমিড

মার্কিন-চীন বাণিজ্য বিরোধের জেরে কয়েক বছর ধরে বেশ ধরাশায়ী বৈশ্বিক অর্থনীতি। ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের এ তিক্ত সম্পর্কে সম্প্রতি নতুন করে যোগ হয়েছে প্রযুক্তি খাতের আধিপত্য নিয়ে দেশ দুটোর মধ্যকার বিরোধ। বিশেষ করে বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে ক্রমেই শক্তিশালী ও আধিপত্যশীল হয়ে ওঠা চীনকে টেনে ধরতে রীতিমতো আটঘাট বেঁধে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে দেশে ও মিত্র দেশগুলোতে একের পর এক পদক্ষেপ তার উদাহরণ। তবে চীনকে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে কাজ করলেও সেটি খুব একটা কাজে আসছে না বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এমনকি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশটিকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রযুক্তি খাতের মৌলিক গবেষণায় বিনিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সার্চ জায়ান্ট গুগলের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এরিক শিমিড। বিবিসির টকিং বিজনেস এশিয়া প্রোগ্রামবিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সম্প্রতি এমনটি জানিয়েছেন গুগলের সাবেক এ প্রধান।

যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক গবেষণায় অর্থায়নে ঘাটতি থাকায় বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতে চীনের দ্রুত আধিপত্যশীল হয়ে ওঠার পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ইনোভেশন বোর্ডের বর্তমান প্রধানের দায়িত্ব থাকা এরিক শিমিড। তবে তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো চীনের তুলনায় প্রযুক্তি খাতে এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু ক্রমেই এ দূরত্ব কমে আসছে।

প্রযুক্তি খাতে চীনের ক্রমেই আধিপত্যশীল হয়ে ওঠার কারণ হিসেবে এরিক বলেন, দেশটি মূলত উদ্ভাবনের ওপর জোর দিচ্ছে। এছাড়া নতুন নতুন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) ব্যবহারে গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রযুক্তিবিষয়ক নতুন নতুন ধারণ প্রকাশের দৌড়েও চীন এগিয়ে যাচ্ছে।

এরিক শিমিডের এমন মন্তব্য প্রমাণিত। কারণ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, বিজ্ঞান ও প্রকৌশলবিষয়ক গবেষণা প্রকাশের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালেই যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে শীর্ষে চলে আসে চীন। এটিই প্রমাণ করে যে চীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

তথ্য-উপাত্তও বলছে, চীন কীভাবে প্রযুক্তি খাতের গবেষণায় বিনিয়োগের ওপর জোর দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে দেশটির জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের কথা বলা যায়। প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ২০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। আরঅ্যান্ডডি খাতের এ বিনিয়োগের ফলে প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ফাইভজি চালুর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

এরিক শিমিডের মতে, প্রযুক্তি খাতে মার্কিন-চীন দূরত্ব কমে আসার অন্যতম কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের অভাব। তিনি বলেন, আমার সারা জীবন ধরে দেখে এসেছি আরঅ্যান্ডডি খাতে যুক্তরাষ্ট্র অপ্রতিরোধ্যভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এ খাতে বিনিয়োগ জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ খাতে এ যাবত্কালের সর্বনিম্ন বিনিয়োগও দেখা গেছে।

গবেষণাও বলছে, আরঅ্যান্ডডি খাতে বিনিয়োগকে যুক্তরাষ্ট্র এখন আগের তুলনায় কম গুরুত্ব দিচ্ছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *