২ শতাংশে নেমেছে জাহাজ ও কার্গো হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি

চট্টগ্রাম বন্দরে বিগত বছরগুলোতে জাহাজ, কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ১০ শতাংশ। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কায় এক লাফে জাহাজে ১ দশমিক ৬৬ ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমে এসেছে প্রবৃদ্ধি। অপরদিকে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে কোনো প্রবৃদ্ধিই হয়নি, বরং উল্টো হ্রাস পেয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

করোনাকালীন চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধির তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ছয় মাসে (ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মে ২০২০) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কার্গো (খোলা পণ্য) হ্যান্ডলিং হয়েছে ৫ কোটি ২৬ লাখ টন ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে মোট ১৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯৮টি। দেশের প্রধান এ সমুদ্রবন্দরে এ সময় জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ১ হাজার ৮৯৯টি। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এর আগে একই সময়কালে (ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে মে ২০১৯) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কার্গো ৫ কোটি ১৬ লাখ টন, কনটেইনার ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২১টি এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল মোট ১ হাজার ৮৬৮টি।

বন্দরের তথ্যমতে, নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে রফতানি খাত। বাংলাদেশ থেকে রফতানি পণ্যের ৯১ শতাংশই পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। মাসভিত্তিক হিসাবে দেখা গেছে, রফতানির ক্ষেত্রে গত প্রায় দেড় যুগ সময়ে সবচেয়ে কম রফতানি এপ্রিলে হয়েছে। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মাত্র ১৪ হাজার ৭৪৪টি কনটেইনারে করে পণ্য রফতানি হয়েছে। তবে গত মে মাসে ৩৩ হাজার ৮৩৬টি কনটেইনারে রফতানি পণ্য পরিবহন হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এক মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি রফতানি পণ্য পরিবহন বাড়লেও গত বছরের মে মাসের তুলনায় তা প্রায় ৫৫ শতাংশ কম। রফতানি পণ্যের তালিকায় তৈরি পোশাক ছাড়াও রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, চা, হিমায়িত খাদ্য ও সার। এছাড়া আমদানির ক্ষেত্রে গত মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার একক, যা আগের মাসে ছিল ৭২ হাজার একক।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের চেয়ারপারসন এসএম আবু তৈয়ব এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রফতানি পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক বাণিজ্যের চিত্র তুলে ধরে। এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানির যে নেতিবাচক চিত্র তা নিশ্চিতভাবেই সাম্প্রতিক সময়ে করোনার আঘাতে হয়েছে। তবে এখন যতটা সম্ভব পুষিয়ে আনতে বন্দরের উন্নয়ন তথা উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সর্বোচ্চ মনোযোগী হতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর আধুনিকায়ন করে বাণিজ্য কার্যক্রমে গতি আনতে হবে।’

করোনায় ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে গতকাল চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে করোনা সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক সাধারণ ছুটি চলাকালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার খালাসের পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। এ অবস্থায় সৃষ্ট বন্দরের পরিচালন ও আর্থিক ক্ষত কমিয়ে আনতে সাতটি পদক্ষেপের কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এর মধ্যে রয়েছে জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম কমাতে কার্গো হ্যান্ডলিং উৎপাদনশীলতা ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা, দ্রুত কনটেইনার ডেলিভারি নিশ্চিত করে কনটেইনারের ডুয়েল টাইম কমিয়ে আনা, বন্দর ব্যবহারকারী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আগের মতো নিয়োজিত রেখে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া, নির্মাণাধীন কনটেইনার ইয়ার্ডগুলোর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করে ব্যাক-আপ ফ্যাসিলিটিজ বাড়ানো, নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) আগামী এক বছরের মধ্যে চালু করে করোনা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নেয়া। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সব ধরনের পণ্যবাহী এফসিএল কনটেইনার অফডক বা আমদানিকারকের চত্বরে পাঠানোর ব্যবস্থা ৩০ জুনের পরও অব্যাহত রাখা গেলে বন্দরের পরিচালন দক্ষতা ও হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পাবে বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকের চাহিদা অনুযায়ী কনটেইনার ডেলিভারি প্রদানের জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। আমদানিকারকরা আগ্রহী হয়ে দ্রুত কনটেইনার ডেলিভারি গ্রহণ করলে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট পরিচালন ও আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *