২৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রস্তাব মার্কিন আইনপ্রণেতাদের

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সাপে-নেউলে সম্পর্ক ভাব যেন সহসাই কাটছে না। দেশ দুটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে গত বছর প্রাথমিকভাবে চুক্তিতে পৌঁছাতে পারলেও সেটি কার্যত আবারো ভণ্ডুল করে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারী কভিড-১৯। এছাড়া আগে থেকেই চীনা প্রযুক্তি পণ্য নিয়ে মাথাব্যথা রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের। এ কারণেই প্রযুক্তিক্ষেত্রে চীননির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে জোরেশোরে কাজ করছে ওয়াশিংটন। এরই অংশ হিসেবে দেশটি নিজস্ব সেমিকন্ডাক্টর তৈরির কারখানা স্থাপনে কাজ করছে। এবার এ খাতের সহায়তায় মার্কিন আইনপ্রণেতার একটি অংশ ২ হাজার ২৮০ কোটি (২২ দশমিক ৮ বিলিয়ন) ডলারের একটি বিল উত্থাপন করেছে। চীনের বিরুদ্ধে প্রযুক্তিগত কৌশলের অংশ হিসেবে দেশটিতে চিপ কারখানা নির্মাণ করতে এ বিল উত্থাপন করেছেন তারা। খবর রয়টার্স।

সেমিকন্ডাক্টরের মতো মূল্যবান এ প্রযুক্তিপণ্য তৈরির জন্য দেশটিতে কারখানা নির্মাণে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় হতে পারে। এ শিল্পে সহায়তা করার জন্য প্রস্তাবিত এ বিলের ৪০ শতাংশ অর্থ আয়কর হিসেবে পরবর্তী সময়ে ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ অর্থের ১ হাজার কোটি ডলার কারখানা নির্মাণে প্রণোদনা হিসেবে ব্যবহারের জন্য ফেডারেল ফান্ডে দেয়া হবে। আর ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার দেয়া হবে এ খাতের গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহার হওয়া চিপের একটি বড় অংশই এশিয়ার দেশগুলো থেকে সরবরাহ হয়। যদিও দেশটিতে চিপের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য বাইরের দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। এর বাইরে ইন্টেল করপোরেশন ও মাইক্রোন টেকনোলজিসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানও যুক্তরাষ্ট্রে চিপ তৈরি অব্যাহত রেখেছে। এর পরও দেশটিতে এ প্রযুক্তিপণ্যটির এখনো বড় সরবরাহকারী এশিয়া। বিশেষ করে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় অর্ধেক চিপ এককভাবে সরবরাহ করে থাকে। আইফোন নির্মাতা অ্যাপল, কোয়ালকম, এনভিডিয়া করপোরেশনের মতো প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর চিপের জন্য টিএসএমসি ও এশিয়ার অন্য উৎপাদক দেশগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়।

এ কারণে বিশ্বের শীর্ষ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টিএসএমসি গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নিজস্ব কারখানা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে এ অ্যাডভান্সড চিপ কারখানার নির্মাণকাজ চলছে। টিএসএমসির অ্যারিজোনা কারখানায় ৫-ন্যানোমিটার ট্রানজিস্টার চিপ তৈরি করা হবে। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ অ্যারিজোনা কারখানায় পূর্ণাঙ্গরূপে চিপ উৎপাদনে যাবে টিএসএমসি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব কারখানা চালুর ফলে স্টেট কিংবা ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে টিএসএমসির জন্য।

অন্যদিকে টিএসএমসির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত। চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের ওপর নতুন বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছে দেশটির বাণিজ্য বিভাগ। যে কারণে টিএসএমসির চিপের অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে নতুন ক্রয়াদেশ নেয়া স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে তারা। এর ফলে টিএসএমসির চিপ ক্রয়াদেশ ঘাটতির মুখে পড়েছে। যদিও ক্রয়াদেশ ঘাটতি পূরণ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে টিএসএমসি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *