বিশ্ব সম্প্রদায়কে ডিজিটাল সহযোগিতা বাড়াতে হবে —আন্তোনিও গুতেরেস

বিশ্ব সম্প্রদায়কে পারস্পরিক ডিজিটাল সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত বৃহস্পতিবার ডিজিটাল যুগে সর্বস্তরের মানুষকে সংযুক্ত, সম্মানিত ও সুরক্ষিত করতে সহায়তার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের ক্রিয়াকলাপ কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ উপস্থাপন করেছেন তিনি। খবর সিনহুয়া।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ডিজিটাল যুগ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সংজ্ঞায়িত হয়েছে। কাজেই বিশ্ব সম্প্রদায়কে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশনের সুযোগ-সুবিধা সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পৌঁছানো এবং সম্ভাব্য বৈশ্বিক ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি রুখতে হবে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সাইবার দুনিয়ার কোনো সীমানা নেই। আজকে আমি জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র, ইন্ডাস্ট্রি অংশীদার ও সুশীল সমাজের প্রতি একটিই আহ্বান জানাতে চাই। সেটা হলো ডিজিটাল প্রযুক্তি ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ান। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব মানুষকে সংযুক্ত করার যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি, তা একমাত্র পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই সম্ভব। কাজেই অনলাইন মানবাধিকারের বিষয়টিকে সম্মান করুন এবং ডিজিটাল যুগের সম্ভাব্য বিপদ থেকে মানবসভ্যতাকে সুরক্ষা দিতে একসঙ্গে কাজ করুন।

জাতিসংঘের বিবৃতিতে জানানো হয়, আন্তোনিও গুতেরেস ডিজিটাল সহযোগিতা বিষয়ে যে রূপরেখা দিয়েছেন, তার দীর্ঘমেয়াদি সুফল মিলবে। বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত থাকবে অসংখ্য অংশীদার যারা ইন্টারনেট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় সমাধানে কাজ করবেন। সম্পূর্ণ বিষয়টি বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব এমন এক সময় বিশ্ব সম্প্রদায়কে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর রূপরেখা উপস্থাপন করলেন, যখন গোটা বিশ্ব কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতির চাকা। নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে কয়েকশ কোটি মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে অসংখ্য মানুষ এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ঘরে বসে অফিসের কাজ পরিচালনা করতে পারছে। কভিড-১৯ মহামারী ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার বিষয়টি আবারো সামনে নিয়ে এসেছে। কারণ ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে চলমান মহামারীর মধ্যেও স্বল্প পরিসরে অর্থনীতি সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মানুষকে দ্রুত করোনা বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে ডিজিটাল প্রযুক্তি বৈশ্বিক যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা অনেকটা সহজ করেছে।

জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইন্টরন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) তথ্যমতে, বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বা ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ এখনো ইন্টারনেটের মতো অত্যাবশ্যকীয় সেবার আওতার বাইরে রয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো ডিজিটাল যুগের সুযোগ-সুবিধায় অংশ নিতে পারছে না, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীরা ব্যাপকভাবে বৈষম্যের শিকার। এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৪৮ শতাংশ নারী ইন্টারনেট সেবার আওতায় এসেছে। একদিকে আরো বেশিসংখ্যক মানুষকে ডিজিটাল সেবায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি এসেছে। অন্যদিকে নারীরা পিছিয়ে রয়েছে। একই সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভুল তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছানো আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সাইবার হামলা ও ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়া মানবাধিকার, গোপনীয়তা এবং তথ্য সুরক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে।

ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণের দ্রুতগতি জাতীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক স্তরে নীতি ও শাসন ব্যবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের রূপরেখায় ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ঝুঁকি হ্রাসের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ইন্টারনেট বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতিসংঘ মহাসচিবের রূপরেখা অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হলে নির্ধারিত ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের শতভাগ মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে বড় অবদান রাখতে পারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক ডিজিটাল সহযোগিতা বাড়ানোর মতো বিষয়।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যসহ নানা কারণে ইন্টারনেট বিশ্বের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটা হুমকির মুখে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময় ইন্টারনেট বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবে এমন হলে তা বৈশ্বিক উন্নয়ন ব্যাহত করবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *