২০ কোটি ডলার বিনিয়োগ পাচ্ছে শেয়ারচ্যাট

ভারতীয় সোস্যাল নেটওয়ার্কিং প্লাটফর্ম শেয়ারচ্যাট। ২০১৯ সালে মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্ম টুইটারের বড় অংকের বিনিয়োগ পেয়েছে এ স্টার্টআপ। শিগগিরই আরো দুই মার্কিন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ পেতে যাচ্ছে শেয়ারচ্যাট বলে ইয়াহু ফিন্যান্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ভারতের বেঙ্গালুরুভিত্তিক স্টার্টআপটি নতুন তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে সার্চ জায়ান্ট গুগল এবং মাল্টিমিডিয়া মেসেজিং অ্যাপ স্ন্যাপচ্যাটের প্যারেন্ট কোম্পানি স্ন্যাপ ইনকরপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ দুই মার্কিন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও টুইটারসহ বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নতুন তহবিল সংগ্রহে কাজ করছে শেয়ারচ্যাট।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রমতে, শেয়ারচ্যাটের গুগল এবং স্ন্যাপচ্যাটের কাছ থেকে ২০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত। এককভাবে শুধু গুগল প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গুগলের বিনিয়োগ পেলে শেয়ারচ্যাটের বাজারমূল্য ১০০ কোটি ডলার ছাড়াবে।

শেয়ারচ্যাট, গুগল এবং স্ন্যাপ কোনো পক্ষই নতুন বিনিয়োগ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। গত বছরজুড়ে মোট ২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহে সক্ষম হয় শেয়ারচ্যাট। এর সুবাদে গত বছর শেষে শেয়ারচ্যাটের বাজারমূল্য ৭০ কোটি ডলারে পৌঁছায়।

গত বছর টেকক্রাঞ্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের উদীয়মান টেক স্টার্টআপগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে শেয়ারচ্যাট। স্থানীয় সোস্যাল মিডিয়া এ নেটওয়ার্কিং প্লাটফর্ম ভারতীয়রা মোট ১৫টি ভাষায় ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। ভারতের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও শেয়ারচ্যাটের অনেক ব্যবহারকারী রয়েছেন।

ভারত তথ্যপ্রযুক্তি সেবার অন্যতম বৃহৎ এবং ইন্টারনেটের দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার। দেশটিতে গ্রাহক বাড়াতে কাজ করছে টুইটার ও স্ন্যাপ ইনকরপোরেশন। ভারতে এ দুই প্লাটফর্মে মোট পাঁচ কোটি মানুষ সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। শেয়ারচ্যাটে বিনিয়োগ ভারতে টুইটার ও স্ন্যাপের গ্রাহক বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত বছরের শেষদিকে শেয়ারচ্যাটের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অঙ্কুশ সচদেব এক সাক্ষাত্কারে বলেন, তাদের সোস্যাল নেটওয়ার্কিং প্লাটফর্ম ভারতে তাত্পর্যপূর্ণভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। শেয়ারচ্যাট ব্যবহারকারীরা প্লাটফর্মটিতে গড়ে প্রতিদিন ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করছেন। এটা তাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই স্থানীয় বাজারে অন্য সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোকে টেক্কা দেবে শেয়ারচ্যাট।

বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ জনবহুল ও ভোক্তা দেশ ভারতকে প্রযুক্তির হাব তৈরিতে রীতিমতো উঠেপড়ে লেগেছে মোদি সরকার। করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে তুলতে এ কারণেই প্রযুক্তি খাতে বড় সুবিধা দিচ্ছে সরকার। এর ফলে বেসরকারি খাতগুলো এখন দ্রুত ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আর দেশটির দ্রুত এমন প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করছে। এরই মধ্যে বিশ্বের বড় বড় জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান দেশটির প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করেছে। আর এসব বিনিয়োগ প্রাপ্তির শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (আরআইএল)। প্রতিষ্ঠানটির টেলিযোগাযোগ ব্যবসা বিভাগ রিলায়েন্স জিও ইনফোকমের বড় একটি অংশের মালিকানায় রয়েছে এসব বিদেশী বিনিয়োগ।

গত বছর জুলাইয়ে ভারতে ১ হাজার কোটি (১০ বিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে গুগল। বড় অংকের এ বিনিয়োগ আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে ধাপে ধাপে সম্পন্ন করবে প্রতিষ্ঠানটি। ভারতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে এ বিনিয়োগ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে এক ঘোষণায় জানান গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাই।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুন্দর পিচাই গুগল ও প্রতিষ্ঠানটির প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের সিইওর দায়িত্বে রয়েছেন। ভারতে বিনিয়োগ বিষয়ে সুন্দর পিচাই বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারী প্রযুক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্ট করেছে। আধুনিক প্রযুক্তির সহজপ্রাপ্যতার কারণে ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতেও ঘরে বসে ব্যবসা পরিচালনা এবং পরিবার-প্রিয়জনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সংযুক্ত থাকা সম্ভব হচ্ছে।

ইন্ডিয়া ডিজিটাইজেশন ফান্ড বিষয়ে সুন্দর পিচাই বলেন, এটা ভবিষ্যৎ ভারতের বাজার ঘিরে তাদের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির অংশ। ভারতে ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে অংশীদারিত্ব ও ইকুইটি বিনিয়োগের মাধ্যমে। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতে ডিজিটাল কার্যক্রম, অবকাঠামো ও ডিজিটাল ইকোসিস্টেম আরো উন্নত হবে।

বিবৃতিতে সুন্দর পিচাই বলেন, তাদের এ বিনিয়োগ হিন্দি, তামিল ও পাঞ্জাবির পাশাপাশি প্রত্যেক ভারতীয়র নিজস্ব ভাষায় তথ্যপ্রযুক্তি কনটেন্টে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে। ভারতীয়দের প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন পণ্য এবং সেবা উন্নয়নে অবদান রাখবে। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের চেষ্টা করছে এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সহজ করবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং সমাজের কল্যাণে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

১৯৯৮ সালে সিলিকন ভ্যালিতে যাত্রা করে গুগল। প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পর ভারতের বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদে কার্যালয় চালুর মধ্য দিয়ে ভারতের বাজারে কার্যক্রম শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে দেশটিতে সার্চ সেবার বিস্তার করাই প্রধান লক্ষ্য ছিল গুগলের। তবে এখন গুগলের কার্যক্রমে অনেক বৈচিত্র্য এসেছে। অনেক নতুন সেবা নিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। ভারত জনসংখ্যার কারণে বড় বাজার হওয়ায় দেশটিতে শেয়ারচ্যাটের মতো প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপে ক্রমে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে গুগল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *