স্বাস্থ্যসেবা শিল্পে দৃষ্টি অ্যামাজনের, নড়েচড়ে বসছে অন্যরা

অ্যামাজনের ফার্মেসি ব্যবসায় নামার উদ্যোগে নড়েচড়ে বসেছেন যুক্তরাজ্যের ওষুধ ব্যবসায়ীরা, যাদের অনেকেই এখন নিজেদের ব্যবসা নিয়েও আতঙ্কিত অবস্থায়। খবর বিবিসি।

অনলাইন ফার্মেসি কুইক মেডসের মালিক আহসান বাট্টি বলেন, আমি মনে করি, এর প্রভাব হবে বিশাল। আমি চিন্তিত। তাদের ব্যাপক মার্কেটিং বাজেট রয়েছে এবং তারা অবশ্যই বাজারে বিদ্যমান অন্য ফার্মেসিগুলোর চেয়ে বড় আকার নিয়ে আসবে। তাদের কারণে বাজারে বিদ্যমান অনেক ফার্মেসিই বন্ধ হয়ে যাবে।

আহসান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরে চালু হওয়া অ্যামাজনের ফার্মেসির কার্যক্রম তিনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে অ্যামাজনের এই ফার্মেসির সেবাদান পদ্ধতি এরই মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। যেখানে ফার্মাসিউটিক্যাল যোগাযোগ সম্পন্ন করার পাশাপাশি প্রাইম মেম্বারশিপ থাকলে ইচ্ছামতো বিনা মূল্যে ডেলিভারি এবং ছাড় মূল্যে পণ্য নিতে পারবে। যার প্রভাবে এরই মধ্যে ওয়ালগ্রিন ও সিভিএসের মতো ফার্মেসি চেইনগুলোর শেয়ারমূল্য হ্রাস পাচ্ছে বলে লক্ষ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

এখনো অবশ্য অ্যামাজন অন্যান্য দেশের জন্য নিজেদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। কিন্তু এদিকে যুক্তরাজ্যের কেমিস্টরা নিজেদের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন।

এখন যারা অনলাইনে নিজেদের ওষুধ ও সংশ্লিষ্ট পণ্য বিক্রি করছেন, আহসান বাট্টি নিজেও সেই দলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তবে অ্যামাজনের আগমনে কেবল তার ব্যবসাই নয়, রাস্তার পাশের ফার্মেসিগুলোর ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন তিনি।

তার মতে, যুক্তরাজ্যের অন্য সব ফার্মেসিতে যার অভাব রয়েছে, তা হলো লজিস্টিক এবং এই জায়গায় অ্যামাজন দারুণ কিছু করে দেখাতে সক্ষম। এটা একদম তা-ই, যা গ্রাহকরা প্রত্যাশা করেন। সকাল ১০টার মাঝে আপনার হাতে একটি ব্যবস্থাপত্র রয়েছে এবং বিকালের মধ্যে অ্যামাজন তার সরবরাহ করে দিচ্ছে। কিন্তু অন্য ফার্মেসিগুলো তা করতে সক্ষম নয়। স্বাধীন ফার্মেসিগুলো এটা কেবল স্থানীয়ভাবে তা করতে পারে।

আহসানের কুইক মেডস যাত্রা শুরু করে মার্চে। এটি অনলাইনেও পণ্য সরবরাহ দিয়ে থাকে এবং ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল, লাইভ চ্যাট ও ভিডিওতেও পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দেশব্যাপী চাহিদা পূরণের জন্য তাদের রয়েল মেইলের ওপর নির্ভর করতে হয়। আহসানের মতে, ঠিক এ জায়গাটিতে এগিয়ে থাকবে অ্যামাজন। কারণ এদিক থেকে তারা অন্যদের চেয়ে অনেক দ্রুত পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম।

তিনি বলেন, রয়েল মেইলে কখনো কখনো ভুল জায়গায় পণ্য চলে যায় কিংবা হারিয়ে যায়। অনলাইন কেনাকাটায় এটা একেবারে অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু যখন আমরা হূদরোগে আক্রান্ত রোগী কিংবা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্য তাত্ক্ষণিক ওষুধ নিয়ে কথা বলি, তখন এটা একটা বড় ধরনের সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তবে এটা কেবল লজিস্টিকের বিষয় নয় যে, যা অ্যামাজনের পক্ষে আছে। আলোচনার টেবিলেও তাদের এগিয়ে থাকার সুযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কেট ম্যাকার্থি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সিভিএস ও ওয়ালমার্ট ওষুধের দাম নিয়ে সবসময় আলোচনা করে। পাশাপাশি বাজারে তাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্ষমতাও রয়েছে। তারা কিছু ওষুধের ক্ষেত্রে একাধিপত্য সৃষ্টি করতে সক্ষম। ফলে তাদের কাছ থেকে না কিনলে ভোক্তাদের জন্য ওষুধের লাগাম পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যদি অ্যামাজন এখন প্রবেশ করে, তবে বাকিদের একাধিপত্য বাধাপ্রাপ্ত হবে। কারণ অ্যামাজনের আরো বেশি অর্থ খরচ করার সামর্থ্য আছে।

অ্যামাজন ফার্মেসি স্রেফ কোনো প্রযুক্তি কোম্পানির বাজারে প্রবেশ নয়, বরং এটা পুরো স্বাস্থ্যসেবা শিল্পের দিকেই শ্যেন দৃষ্টি রাখছে। বর্তমানের স্বাস্থ্যসেবা খাত অনেকটা প্রতিক্রিয়াশীল ব্যবস্থা। অসুখ হলো, চিকিৎসক আপনাকে ওষুধ দিল; তারপর ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনলেন। কিন্তু অ্যামাজনের মাধ্যমে এ শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসা যাবে। ওষুধ, নিউট্রিশন পণ্য, শরীরচর্চা সামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্টসহ বৈচিত্র্যময় পণ্যের বাজার একই ছাতার নিচে নিয়ে আনতে সক্ষম অ্যামাজন।

অবশ্য এতে বিদ্যমান স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভয় পাওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের স্বাস্থ্যসেবা বিশ্লেষক ক্যাট ম্যাককার্থি। তিনি বলেন, অ্যামাজন যে খাতেই প্রবেশ করে, তাতে উত্কর্ষ বৃদ্ধি করে এবং এ খাতের পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানগুলোকে হটিয়ে দেয় না। একই বিষয় প্রযোজ্য হবে স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানিগুলোর জন্য।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *