২০১৯ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রাপ্তিতে ভারতের অবস্থান নবম

২০১৯ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে নবম স্থানে রয়েছে ভারত। গত বছর ভারত প্রায় ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার এফডিআই পেয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত বিভাগ। চলতি বছর নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সংকট চললেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভারতে বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাসের আশঙ্কা নেই বলেই মনে করছে তারা। খবর পিটিআই।

গত সোমবার দি ইউএন কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আঙ্কটাড) এক প্রতিবেদনে জানায়, নভেল করোনাভাইরাস মহামারী-পরবর্তী সময়ে ভারতের আর্থিক প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও দেশটির বিশাল বাজার এফডিআই আকর্ষণ করতে সক্ষম। ২০১৮ সালে ভারতে এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। ওই বছর এফডিআই আকর্ষণে শীর্ষ ২০টি দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল ১২তম। ২০১৯ সালে এফডিআই প্রাপ্তি ৯০০ কোটি ডলার বেড়েছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এফডিআই আকর্ষণকারী শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় রয়েছে ভারত। তবে ২০২০ সালে এফডিআই প্রবাহ ২০১৯ সালের ১ দশমিক ৫৪ ট্রিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০০৫-এর পর এই প্রথম বিশ্বব্যাপী এফডিআইয়ের পরিমাণ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের নিচে নামতে পারে।

কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। এজন্য ২০২০ সালে ভারতের বাজারে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ সংকুচিত হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২০ সালে ভারতে এফডিআই প্রবাহ ৪৫ শতাংশ কমবে। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এফডিআই প্রবাহ হ্রাস পাবে।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়, উপ-অঞ্চল (সাব-রিজিয়ন) হিসেবে ৭০ শতাংশেরও বেশি অভ্যন্তরীণ স্টক নিয়ে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বোচ্চ এফডিআই আকর্ষণকারী দেশ ভারত। গত বছর দক্ষিণ এশিয়ায় এফডিআই প্রবাহ ১০ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর বড় অংশই গেছে ভারতে। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগের মাত্র ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে ভারতে। একই সঙ্গে একীভবন ও অধিগ্রহণের পরিমাণ ৫৮ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দীর্ঘ সময় ধরে এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে ভারতের রেকর্ড সবচেয়ে ভালো এবং নভেল করোনাভাইরাস মহামারী-পরবর্তী সময়েও বিশাল বাজারের কারণে ভারতে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আসবে।

লকডাউন ও তত্পরবর্তী পুনরুদ্ধার পর্বে এফডিআই প্রবাহের সংকট হলো মধ্যমেয়াদে লজিস্টিকসগত চ্যালেঞ্জের ব্যাপকতা।

মূলত ডিজিটাল অর্থনীতি, আবাসন ও সম্পদ খাত বিনিয়োগ আকর্ষণ করলেও মহামারী-পরবর্তীতে এ খাতগুলোয় ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। ডিজিটাল অর্থনীতি বিনিয়োগ আকর্ষণ অব্যাহত রাখলেও আবাসন খাত বেশকিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। চাহিদা সংকোচন এবং আর্থিক টানাপড়েনে এ খাতের কয়েক বছর ধরে সম্প্রসারমাণ খাতটির ওপর বড় আকারের চাপ সৃষ্টি করবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিনিয়োগকারীরা ৬৫ কোটি ডলারের চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ভারতের সম্প্রসারমাণ ডিজিটাল খাতের। বর্তমানে ফ্লিপকার্ট ও জোম্যাটোর মতো আইসিটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। একীভবন ও অধিগ্রহণের (এমঅ্যান্ডএ) বেশ কয়েকটি বড় চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে।

সাপ্লাই চেইনে মারাত্মক সংকটের কারণে আগামী দিনগুলোয় উন্নয়নশীল এশিয়ায় এফডিআই প্রবাহ বিঘ্নিত হবে বলে প্রতিবেদনে শঙ্কা ব্যক্ত করা হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *