১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার প্রণোদনার প্রস্তাব হোয়াইট হাউজের

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনের সময়ক্ষণ দ্রুত ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে একটি চুক্তিতে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের সম্মত চেষ্টার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজ ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের একটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার প্রস্তাব করেছে। খবর এএফপি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—যিনি চলতি সপ্তাহে কভিড-১৯ সৃষ্ট ক্ষতি থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের প্রণোদনা ক্ষেত্রে নিজ অবস্থান পরিবর্তন করেছেন—মনে হয় এর মধ্য দিয়ে আগামী ৩ নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে দেশটির অর্থনীতিতে তহবিল জোগাতে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটাতে প্রয়াসী।

আশা করা হচ্ছে, আগের ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার প্যাকেজের কিছুটা পরিমার্জন করা নতুন প্রস্তাবটি ট্রাম্প প্রশাসনকে ডেমোক্র্যাটদের পাস করা ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যয়ের সর্বশেষ বিলের কাছাকাছি নিয়ে আসবে।

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র আলিসা ফারাহ বলেন, আর্থিক সহায়তার ব্যাপারে সরকার একটি সমঝোতা বিন্দুতে আসতে ইচ্ছুক বটে, কিন্তু তা ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কিছুটা নিচে রাখতে চায় তারা। তবে প্রতিপক্ষ জো বাইডেনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ে সচেষ্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো বড় ধরনের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। সাম্প্রতিক এক রেডিও সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক মানুষ আর্থিকভাবে ভুগছে। আমি একটি অধিকতর বড় প্রণোদনা প্যাকেজ দেখতে চাইব, যা ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত প্যাকেজের চেয়েও বেশি। আমি চাই মানুষের কাছে অর্থ পৌঁছুক। কারণ এই আর্থিক অভিঘাতে তাদের কোনো ভুল নেই।’

এ বিবৃতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থানের সর্বশেষ নাটকীয় পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যিনি কেবল কয়েক দিন আগেও ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আলোচনা বন্ধের ঘোষণা এবং নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংকটে থাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বেকার কর্মীদের আর কোনো নতুন আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছিলেন।

অবশ্য সিনেটের সংখ্যাধিক্যের নেতা মিচ ম্যাককনেল কতটা ব্যয় হবে, সে বিষয়ে বিপুল পার্থক্যের কারণে নির্বাচনের আগে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের বিষয়ে কংগ্রেসের সম্মত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে আর কোনো পুনরুদ্ধার প্যাকেজের দরকার নেই উল্লেখ করে রিপাবলিকান এ সিনেটর আইনপ্রণেতাদের রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে কয়েক সপ্তাহ ধরে সহায়তাসংক্রান্ত আলোচনা চালিয়ে যেতে সিনেটের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানুচিনের প্রচেষ্টার ফলে ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কেয়ারস অ্যাক্ট বিল এবং অন্য আর্থিক পদক্ষেপসহ একটি বড় ধরনের নতুন ত্রাণ প্যাকেজের ব্যাপারে আশার সঞ্চার হয়েছে—যা কংগ্রেসে পাস হওয়া মোট সহায়তার পরিমাণ ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি উন্নীত করবে।

পেলোসি জানান, নীতি ও অর্থ উভয় দিক থেকে দুই দলের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য এখনো রয়ে গেছে। তিনি শিগগিরই এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, কর্মচ্যুতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর দেউলিয়াত্বের ঢেউ ঠেকানো এবং বেকারদের অব্যাহত সমর্থন জোগাতে সরকারের নতুন ধাপের সহায়তা প্যাকেজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আইএমএফও মহামারী-সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধকল থেকে উত্তরণে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোকে সহায়তা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

নির্বাচনী প্রচারাভিযানের চলমান উত্তেজনাময় দিনগুলোর মধ্যে হঠাৎ করে ট্রাম্প গত মঙ্গলবার সহায়তাসংক্রান্ত আলোচনা বন্ধ করা দেয়ায় চুক্তির বিষয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। কিন্তু উভয় রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়িক নেতাদের বিক্ষোভ এবং শেয়ারবাজারের আকস্মিক পতনে তিনি ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন।

হোয়াইট হাউজের সম্প্রসারিত পুনরুদ্ধার প্রস্তাবের খবর প্রকাশের পর ট্রাম্পের সাফল্যের অন্যতম প্রিয় সূচক ওয়াল স্ট্রিটে বাড়তি কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় এবং শেয়ারবাজারের ডাউ সূচকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশের সামান্য উল্লম্ফন ঘটে।

ট্রাম্প বরাবরই নভেল করোনাভাইরাসকে অবহেলা করলেও তার ফেলো রিপাবলিকান নেতা ম্যাককনেল মানুষকে মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি পরিষ্কার যে এ রোগ সহজেই যাচ্ছে না। একে নির্মূল করার একমাত্র উপায় টিকা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *