১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি, তানাজের বিরুদ্ধে মামলা

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তানাজ এন্টার প্রাইজের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে।

গতকাল এ মামলা করা হয় বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। তিনি জানান, একজন গ্রাহক সুনির্দিষ্ট ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ করায় ভ্যাট গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠানের নাখালপাড়া কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। সংস্থার উপপরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার এ অভিযান পরিচালনা করেন।

এ আমদানিকারকের বিরুদ্ধে আইসিডি কাস্টমস হাউজ দিয়ে ব্যাটারির একটি চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য খালাস করার অভিযোগে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করে।

ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানে দেখা যায়, নাখালপাড়ার নয়তলা ভবনের নবম তলায় একটি কক্ষে প্রতিষ্ঠানটির অফিস, যা তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী জানান, প্রতিষ্ঠানটির মালিক এ ভবনের সপ্তম তলায় থাকেন।

গোয়েন্দা দল সপ্তম তলায় গিয়ে সরকারি কাজে সহযোগিতা চাইলে প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ এতে সাড়া দেননি বলে জানান মইনুল খান। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সরকারি কাজে অসহযোগিতার কারণে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের সহায়তা নেয়া হয়। তেজগাঁও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে নবম তলায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির অফিস কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করে ভ্যাট গোয়েন্দার দল। অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে রাখা বাণিজ্যিক কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

স্থানীয় ভ্যাট সার্কেল অফিস ও অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট-সংক্রান্ত দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়। এসব দলিলাদি পর্যালোচনা শেষে ভ্যাট গোয়েন্দার দল এ আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়।

ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্ত অনুসারে, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ উপকরণ-উৎপাদ সহগ দাখিল না করে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৮ টাকা রেয়াত গ্রহণ করে, যা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ধারা ৪৬ মোতাবেক অবৈধ।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৬১ টাকার পণ্য সরবরাহ করে। এতে ৩৯ লাখ ৮১ হাজার ৬৬১ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। এ ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৪ লাখ ৯০ হাজার ২৪৩ টাকা আদায়যোগ্য হয়েছে।

তদন্তে অবৈধ রেয়াত বাবদ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৮ টাকা, ভ্যাট ফাঁকি ৩৯ লাখ ৮১ হাজার ৬৬১ টাকা ও প্রযোজ্য সুদ বাবদ প্রায় ৪ লাখ ৯০ হাজার ২৪৩ টাকাসহ সর্বমোট ১ কোটি ৮০ লাখ ১১ হাজার ৫৯০ টাকা ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়।

মইনুল খান জানান, ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ আইন অনুসারে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ টাকা আদায়ের আইনগত কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মামলাটি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা উত্তরে প্রেরণ করা হবে। মামলাটি ন্যায় নির্ণয়নে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমদানিকারকের বিরুদ্ধে এ দাবি করা টাকার অতিরিক্ত দ্বিগুণ পরিমাণ জরিমানা হতে পারে।

তিন আরো জানান, আমদানিকারক তানাজ এন্টারপ্রাইজ ভ্যাট গোয়েন্দার ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বরের একটি অনুসন্ধানের নোটিস হাইকোর্টে রিট (রিট নং-৬০২৪/২০২০) দায়ের করে স্থগিত করে। পরে ভ্যাট গোয়েন্দার পক্ষ থেকে চেম্বার জজ আদালতে সিএমপি (নং-৬৬৮/২০২০) দায়ের করে উক্ত স্থগিতাদেশ স্থগিত করা হয়। এ পরিপ্রক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানটি পরিচালনা করা হয়।

তদন্তে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ভ্যাট গোয়েন্দার অডিটের আওতায় আনা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার ধারণা, কাস্টম হাউজে আন্ডার-ইনভয়েসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পণ্য খালাস করে ভ্যাট কর্তৃপক্ষের কাছে কম মূল্য সংযোজন ঘোষণা করেছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ ভ্যাট রাজস্ব হারিয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *