বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) উদ্যোগে গতকাল ‘ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা নিয়ে বিষয়ভিত্তিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এক বক্তা বলেন, ১৯৫৩ সালের আইন দিয়ে ঢাকার উন্নয়ন সম্ভব না। রাজউককে ঢেলে সাজাতে হবে, যেখানে উন্নয়ন কার্যক্রম এবং পরিচালনা কার্যক্রম আলাদাভাবে চালাতে হবে।
বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
সভায় আলোচক ছিলেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি এবং প্রখ্যাত নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক প্রকৌ. ড. শামসুল হক, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সংস্থার (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. শাকিল আকতার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উন্নয়ন) এবং বাংলাদেশ বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ ড. চৌধুরী মো. জাবের সাদেক, বিআইপির সাবেক সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. একেএম আবুল কালাম, সাবেক সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ স্থপতি সালমা এ শফি এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম।
ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র বলেন, উত্তরা পরিকল্পিত এলাকায় পরিকল্পনামাফিক কোনো কাঁচাবাজার নেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভাবে লেক ভিউতে গড়ে উঠছে উচ্চতর ভবন, খেলার মাঠ বা খোলা জায়গাও চলে যাচ্ছে দখলে। বাস বা ট্রাক টার্মিনালের অনুপস্থিতি, পুলিশের জব্দ করা পরিবহনগুলোর জন্য কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই। ভূমির বিন্যাস নিশ্চিত করার মাধ্যমে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং প্রাকৃতিক জলাশয়, খাল, পুকুর সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের একশন প্লান করা হয়েছে এবং এই প্লান বিবেচনায় রেখেই নতুন ওয়ার্ডের উন্নয়ন করা হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ১৯৫৩ সালের আইন দিয়ে ঢাকার উন্নয়ন সম্ভব না। রাজউককে ঢেলে সাজাতে হবে, যেখানে উন্নয়ন কার্যক্রম এবং পরিচালনা কার্যক্রম আলাদাভাবে চালাতে হবে এবং পেশাজীবীদের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। জলাশয় ফিরিয়ে আনার জন্য কী প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে তা জানাতে হবে এবং জলাশয় আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে।
অধ্যাপক ড. একেএম আবুল কালাম শিল্প এলাকাকে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি উল্লেখ করে বলেন, শিল্প এলাকার বিশদ পরিকল্পনা দরকার এবং শিল্প এলাকাগুলোকে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিশাল পরিকল্পিত শহর পূর্বাচল প্রকল্প ১০ লাখ মানুষের জন্য করা হয়েছে কিন্তু সেখানে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে কিনা বা অন্য নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং নতুন শহর গড়ে তুললে সেটাকে স্বতন্ত্র শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা বলেন। অন্যথায় নতুন শহর গড়ে উঠলেও কেন্দ্রীয় শহরের ওপর চাপ কমবে না বরং আরো বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিআইপি সভাপতি আকতার মাহমুদ নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় নতুনত্ব এসেছে বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া এ পরিকল্পনায় নতুন মাত্রা হিসেবে এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানান।
পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় তা সন্নিবিষ্ট করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে মানবিক, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর পরিকল্পনা অনুশীলনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।