হাফিজ বিএনপির পর্যবেক্ষণে, শওকতের জবাবে সন্তুষ্ট দল

শোকজের জবাবে সন্তষ্ট হয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে ক্ষমা করে দিয়েছে বিএনপি। তবে আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শোকজের কড়া জবাব দেওয়া হাফিজের কর্মকান্ড আরও পর্যবেক্ষণ করবে দলটি।

সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে শওকত মাহমুদকে চিঠি দেয় বিএনপি। এতে ভবিষ্যতে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তবে এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

জানতে চাইলে হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, দায়িত্ব পালনে অপারগতা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ সম্পর্কিত কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব ১৯ ডিসেম্বর দিয়েছি। এর পর দলের কাছ থেকে কোনো উত্তর পাইনি।
[১] এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রা শুরু করলো লালমনি এক্সপ্রেস ≣ [১] ৫টি চাপাতিসহ ৫ ডাকাত গ্রেপ্তার ≣ [১] ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পেলেন মোহাম্মদ ইউসুফ

বিএনপি গঠিত মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি বরিশাল বিভাগীয় উদযাপন কমিটিতেও রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। তবে গত রবিবার গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বরিশাল বিভাগীয় উদযাপন কমিটির প্রথম সভায় তিনি অংশ নেননি। এ বিষয়ে হাফিজউদ্দিন বলেন, সভার বিষয়ে আমাকে জানানো হয়নি।

বরিশাল বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বৈঠকে হাফিজউদ্দিন আহমেদসহ সবাইকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনিসহ কমিটির বেশ কয়েক সদস্য অংশ নেননি।

বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক জানান, হাফিজউদ্দিনের বিষয়ে আরও সময় নিতে চায় দল। অতীতসহ তার বর্তমান কর্মকা- পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি কী চান তা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। সব কিছু বিবেচনা করে হাইকমান্ড সন্তুষ্ট হলে তাকেও চিঠি দিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে।

ওই নীতিনির্ধারক আরও বলেন, শোকজের বিষয়ে হাফিজউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সে অধিকারও তার আছে। কিন্তু লিখিত জবাবের শেষদিকে তিনি দলের জাতীয় কাউন্সিলের অনুষ্ঠানসহ চার দফা সুপারিশ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় যারা জিয়া পরিবারের পাশে ছিলেন তারা এ বিষয়টি আবারও সন্দেহের চোখে দেখছেন। সেই সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপির বিরুদ্ধে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে দল ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল। উনার সুপারিশকে অনেকে সেভাবে দেখছেন।

গত ১৯ ডিসেম্বর হাফিজউদ্দিন তার বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শোকজের লিখিত জবাবের বিষয়ে জানান। এ সময় তিনি আগামী মার্চের মধ্যে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান, দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি বাণিজ্য এবং মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তসহ চার দফা সুপারিশ পেশ করে বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সভা হয়নি। বক্তব্য রাখার কোনো সুযোগ পাইনি। তাই নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে বিএনপির একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে সুপারিশ পেশ করছি।

আরেকটি সূত্র জানায়, হাফিজউদ্দিনকে করা কারণ দর্শাও নোটিশে দলীয় দায়িত্ব পালনে অপারগতা, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্য এবং দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রতি অবজ্ঞা ও অসম্মানসূচক বক্তব্য প্রদানসহ ১১টি বিষয়ে লিখিত জবাব জানতে চাওয়া হয়। হাফিজউদ্দিন তার জবাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানাবেন এমন সিদ্ধান্ত নেন, কথাও বলেন। কিন্তু সে সময় এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলতে তাকে বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা অনুরোধ করেন। এমনকি দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এ বিষয়ে তার সঙ্গে দেখা করে কথাও বলেন। কিন্তু অনুরোধ না রাখায় এই ভাইস চেয়ারম্যানের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছে দলের হাইকমান্ড।

দলের আরেকজন নীতিনির্ধারক জানান, দলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা ক্ষমা- সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দলের চেয়ারম্যানকে গঠনতন্ত্রে দেওয়া আছে। যেহেতু এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রয়েছেন, তিনিই সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে তাতে দলের স্থায়ী কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। এখন করোনার কারণে স্থায়ী কমিটির সভা ভার্চুয়ালি হচ্ছে, তাই কোনো সিদ্ধান্ত অনুমোদনের সুযোগ নেই। যখন সরাসরি উপস্থিত হয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠক করবেন তখন অনুমোদন নেওয়া হবে।

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, যে ভাষায় হাফিজউদ্দিনকে শোকজ করা হয়েছে, এটি তার মতো সিনিয়র নেতা ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার জন্য বেদনার। এমন ঘটনা যাতে আর কোনো নেতার ক্ষেত্রে না হয় তা দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের দেখা উচিত। কারণ তাকে শোকজের ঘটনা দলের জন্য বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। দ্রুত এর ইতিবাচক সমাধান হওয়া উচিত।

দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডের অভিযোগে গত ১৪ ডিসেম্বর দলের হাফিজউদ্দিন ও শওকত মাহমুদকে শোকজ করে বিএনপি। শওকতকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এবং হাফিজকে পাঁচ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। দুজনই নির্দিষ্ট সময়ে শোকজের জবাব দেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *