বদমেজাজ সুখ ও সম্মান ম্লান করে দেয়

বদমেজাজ বলতে বোঝায় সামান্য বিষয়ে রাগারাগি, বকাঝকা ও গালাগাল করা। বদমেজাজি ব্যক্তি যা বলে সেটাই করে। যার মধ্যে কারো মতামত শোনা বা আপস-মীমাংসার মনোভাব নাই। এরা অহংকারী, উদ্ধত, রুক্ষ, নির্দয় ও একগুঁয়ে স্বভাবের হয়ে থাকে।

এই স্বভাবের মানুষের ঘর-সংসার নরকসম। বদমেজাজি মানুষ শুধু নিজেই অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে তা নয়, এই স্বভাবের মানুষের চারপাশের লোকদের মানসিক কষ্ট-যাতনা ও অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দাম্পত্য জীবন থেকে ভালোবাসা, হৃদ্যতা ও সুসম্পর্ক বিদায় নেয়। সর্বদা ঝগড়াঝাঁটি ও বিবাদ-কলহ লেগে থাকে। এমন লোকের কারণে সমাজে প্রচুর সমস্যা ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে এই স্বভাবের মানুষ বন্ধু ও সঙ্গীহীন হয়ে পড়ে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সম্বোধন করে কোরআনের এক আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে—‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমলহৃদয় হয়েছিলে। যদি তুমি রূঢ় কঠোরচিত্ত হতে, তাহলে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত…।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

বদমেজাজি অহংকার থেকে উদ্ভূত। এ ধরনের মানুষ আল্লাহর কাছে ঘৃণিত, মানুষের কাছেও ঘৃণিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘…নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ সুরা : লোকমান : ১৮)
[১] ঢাকায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করোনায়, জেলা ভিত্তিক আক্রান্তদের সংখ্যা প্রকাশ করেছে আইইডিসিআর ≣ [১] সিরাজগঞ্জে ১০ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ≣ [১] আল্লামা শাহ আহমদ শফী হাসপাতালে ভর্তি, দোয়া কামনা

হাদিসে এসেছে, হারিস ইবনে ওয়াহাব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কঠোর ও রুক্ষ স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০১)

তিনি আরো বলেন, ‘আমি তোমাদের কি জাহান্নামিদের কথা বলব না? তারা হলো, যারা অনর্থক কথা নিয়ে বিবাদ করে, আর যারা বদমেজাজি অহংকারী।’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৬)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদার মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৬৪)

জারির (রা.) নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, যাকে কোমলতা ও নম্রতা থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করা হয়। (মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৫০৬৯)

একবার রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)-কে বলেন, ‘কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা থেকে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৪)

প্রিয় পাঠক! আপনার মেজাজ, আপনার ধ্বংস!

নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ হয়ে গেছে। রোজা কখনোই ছাড়েননি, যৌবন আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত পর্দা করে আছেন, মাশাআল্লাহ। এত ইবাদতের পরও হাশরের ময়দানে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতে পারেন শুধু বদমেজাজি ও অশ্লীলভাষী হওয়ার কারণে!

স্পষ্টভাবে হাদিসে এসেছে, বদমেজাজি ও অশ্লীলভাষীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জান্নাত নম্র ও বিনয়ী মানুষদের জন্য। তবে ‘আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা’—এই নীতির আলোকে মেজাজ প্রয়োগ করা যাবে। যেমন—কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে, ইসলামের অকাট্য বিষয় নিয়ে বেয়াদবি বা কটাক্ষ করলে সে ক্ষেত্রে রাগ প্রযোজ্য। কোনো জালিমকে দুর্বলের ওপর জুলুম করতে দেখলে সে ক্ষেত্রে মেজাজ প্রয়োগ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করে, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। তার সহচররা কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল…।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ২৯)

প্রিয় ভাই! আপনি কি কারো ভালো কথায়, খারাপ কথায় হুট করেই রেগে যান? চিল্লাচিল্লি উচ্চৈঃস্বর ছাড়া যেন কথাই বলতে পারেন না? পরিবারে মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন আর বন্ধু-স্বজন সবার সঙ্গেই আপনার রাগী রাগী আচরণ? সুন্দর ও কোমলভাবে শান্তভাবে কথা বলাটা আপনার জন্য খুব কঠিন? কেন? আপনি এমন কেন? আপনার কিসের এত বাহাদুরি? পৃথিবীর সব মানুষ কোনো না কোনো দিকে এগিয়ে আবার অন্য দিকে পিছিয়ে। তাহলে আপনি এত উদ্ধত কেন? সব কিছু কি শান্তভাবে বলা ও সমাধান করা যায় না?

প্রিয় ভাই, মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করুন! এভাবে জান্নাত হারিয়ে ফেলবেন না!

আপনি কি জানেন, একজন মুমিন কখনোই বদমেজাজি ও অশ্লীলভাষী হতে পারে না।

পরিশেষে জান্নাতে যেতে চাইলে প্রিয় নবীর এই হাদিস মনে রাখুন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘…তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতি হবে। এক প্রকার মানুষ তারা, যারা রাষ্ট্রীয় কর্ণধার, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী এবং নেক কাজের তাওফিক লাভে ধন্য। দ্বিতীয়ত, ওই সব মানুষ, যারা দয়ালু এবং আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোমলচিত্ত। তৃতীয়ত, ওই শ্রেণির মানুষ, যারা পূতপবিত্র চরিত্রের অধিকারী, যাঞ্চাকারী নয় এবং সন্তানাদি সম্পন্ন লোক।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭০৯৯)

মহান আল্লাহ আমাদের জান্নাতি মানুষ হিসেবে কবুল করুন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *