হাওয়াই আলোচনায় ফেজওয়ান বাণিজ্য চুক্তির পালে হাওয়া

নভেল করোনাভাইরাস ইস্যুতে বেইজিংকে ট্রাম্প প্রশাসনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, হংকং ইস্যুতে ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারিসহ বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হতে বসেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ‘ফেজওয়ান’ বাণিজ্য চুক্তি। কিন্তু চায়না কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ইয়াং জিয়েচির সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর ‘গোপনীয়’ হাওয়াই আলোচনার পর চুক্তিটির পালে কিছুটা হাওয়া লেগেছে। চীন বলছে চুক্তিটির শর্ত মেনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়াবে তারা। এদিকে পম্পেও জানিয়েছেন, চীনা প্রতিনিধিরা তাকে কথা দিয়েছেন যে বাণিজ্য চুক্তিটির প্রতিশ্রুতিগুলো তারা রক্ষা করে চলবেন। খবর ব্লুমবার্গ।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের হিকামএয়ার ফোর্স বেইজে পম্পেও ও জিয়েচির মধ্যে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ওই আলোচনায় বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন আমদানিকারক চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন, শস্য ও ইথানলের মতো কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে ওয়াকিবহাল দুজন ব্যক্তি জানিয়েছেন। আরেক ব্যক্তি জানিয়েছেন, চীন সরকার দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোকে ফেজওয়ান বাণিজ্য চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার উদ্যোগ নিতে বলেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থতার পেছনে চীন সরকারের একগুঁয়েমিকেই দায়ী করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়া উইঘুর মুসলমানদের ওপর কমিউনিস্ট সরকারের দমননীতিরও কড়া সমালোচনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পর্ক এখন সমালোচকদের আতশি কাচের নিচে রয়েছে। বিশেষ করে সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক জন বোল্টনের নতুন বই প্রকাশের পর। এ বইতে বোল্টন দাবি করেছেন, গত বছর ট্রাম্প শি জিনপিংকে অনুরোধ করেছিলেন, চীন যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য আমদানি বাড়িয়ে তার পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় ভূমিকা রাখে।

এমনই এক সময়ে পম্পেও ও ইয়াং জিয়েচির মধ্যে আলোচনা হলো এবং চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য আমদানি বাড়ানোর আশ্বাস দিল। অবশ্য চীনের বাণিজ্য বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো হয়নি।

ফেজওয়ান বাণিজ্য চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩ হাজার ৬৫০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য আমদানির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চীন। তবে মার্কিন কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আমদানি করেছে মাত্র ৪৬৫ কোটি ডলারের পণ্য।

চুক্তির অবাধ্য হবে না চীন

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ফেজ ওয়ান বাণিজ্য চুক্তিটির প্রতি সম্মান দেখানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন। বৃহস্পতিবার এক টুইটার পোস্টে তিনি বলেন, ‘ইয়াং জিয়েচির সঙ্গে আমার বৈঠকে তিনি বাণিজ্য চুক্তিটির সব শর্তের প্রতি সম্মান দেখানো ও সেগুলো প্রতিপালনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’

চীনা প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের পর প্রথম কোনো ইতিবাচক ফল হিসেবে এ তথ্য জানান পম্পেও। ১৫ জুনের ওই চুক্তির অধীনে চীন দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অবশ্য ট্রাম্প এক পর্যায়ে ওই চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি দেন।

চীনা এয়ারলাইনসের অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন নাকচ

যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত সেবার বাইরে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল চীনা এয়ারলাইনসগুলো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। অবশ্য তারা বলেছেন, চীন সরকারের যে নীতির কারণে মার্কিন যাত্রীবাহী বিমান সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বেইজিং যদি সেগুলোয় সংশোধন আনে তবে তারাও বিষয়টি নিয়ে ভাববে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, বর্তমানে চীনের চারটি এয়ারলাইনস প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে সম্মিলিতভাবে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে। এ চারটি কোম্পানি ফ্লাইট পরিচালনার সংখ্যা বাড়িয়ে একটি সার্ভিস শিডিউল দাখিল করেছিল। কিন্তু সেটির অনুমোদন দেয়া হয়নি। এছাড়া অন্য তিনটি চীনা এয়ারলাইনস যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন চেয়েছিল। সেটিও বাতিল করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *