নভেল করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই নেতা। আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী, এমপিসহ আরো অনেকেই। তবে এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের মাঝে ভীতি তৈরি হলেও মাঠ ছাড়তে চায় না দলটি। বরং ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেতাকর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকার কথা বলছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ। এছাড়া বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন সরকারদলীয় সাতজন এমপি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদের। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাজী মকবুল হোসেন।
নেতাকর্মীরা জানান, দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্নভাবে মাঠে সক্রিয় আছেন। আর এতে নেতাকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সম্প্রতি কয়েকজন শীর্ষনেতা মৃত্যুবরণ করায় নেতাকর্মীদের মাঝে ভীতিও তৈরি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংসদ সদস্য বলেন, এলাকায় গেলে দেখি কর্মীরা সবাই আমাদের ঘাড়ের ওপর এসে বসে থাকেন। নেতাকর্মীদের বারবার নিষেধ করা সত্বেও তারা সামাজিক দূরত্ব মানতে চান না। এটা অবশ্য দীর্ঘদিনের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। করোনা এসে সেই আন্তরিকতার জায়গায় ছেদ ধরিয়েছে।
দলের মধ্যস্তরের এক নেতা বলেন, করোনা আক্রান্ত জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ ছুটি চলাকালে মাঠে ছিলেন। তারা সাধারণ জনগণের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হয়নি, এতে তারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক জনপ্রতিনিধি সপরিবারেও আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু তার পরও দলের নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন। কিন্তু প্রবীণ নেতারা আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকের মাঝে ভীতি কাজ করছে।
এ ব্যাপারে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, রাজনীতি যারা করেন তারা একটু সাহসী হয়ে থাকেন। এ কারণে তাদের মাঝে সাধারণত ভীতি কাজ করে না। তবে তিনিও তো কারো বাবা, স্বামী বা সন্তান। পরিবার থেকে তো এক ধরনের চাপ আছেই। আমার সন্তান তো চায় না সে পিতাহারা হোক, আমার স্ত্রী চায় না সে বিধবা হোক, মা চায় না তিনি সন্তানহারা হোন। তাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ আছে।
তিনি বলেন, আমরা কর্মীদের বারবার সাবধান করছি। কিছু কমবয়সী কর্মী আছেন, তারা মনে করেন করোনা তাদের আক্রান্ত করতে পারবে না, তারা অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে কাজ করছেন। এতে অনেক তরুণই আক্রান্ত হচ্ছেন। আমরা সজাগ করার চেষ্টা করছি।
তবে করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি থাকলেও নেতাকর্মীরা ভীত হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের শক্তি ও সাহসের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। করোনাকালীন তিনি সাহস নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু তিনি স্বাস্থ্যবিধি মানছেন। তিনি সংসদেও যাচ্ছেন। রাষ্ট্রের কোনো কাজ বাদ দিচ্ছেন না। তিনি আমাদের সব অনুপ্রেরণা, শক্তি ও সাহসের উৎস। জাতিকে আমরা অন্ধকারে রাখতে পারি না। নেতৃত্ব তো দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, আমরা তো দেশের বাইরের কেউ না। দেশের অন্যান্য মানুষের করোনা হলে আমাদেরও হবে—এটাই স্বাভাবিক। করোনা কোনো দল চেনে না। করোনা মানুষ চেনে। তবে এ পরিস্থিতিতে আমরা যারা রাজনীতি করি, জনপ্রতিনিধি এবং দলীয় নেতাকর্মী, তাদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার সুযোগ নেই। এ কারণে সাবধানতা অবলম্বনের পরও কোনো খামতি হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা নেতাকর্মীদের বলেছি, আপনারা মানুষের জন্য কাজ করুন, কিন্তু পরিপূর্ণভাবে সাবধানতা অবলম্বন করুন। অসাবধানতায় অনেকই আক্রান্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, এখন আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। সামাজিক দূরত্বটা মানতে হবে। তাছাড়া কোনো উপায় নেই। এজন্য নেতাকর্মীদের সাবধানে কাজ করার জন্য অনুরোধ করছি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, তারা কেউ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন নই। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মধ্যে কারো কারো করোনা হওয়াটা স্বাভাবিক। এতে কারো কারো মৃত্যুবরণটাও স্বাভাবিক, তবে সেটা দুঃখজনক। এক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, কঠিন হলেও সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। তিনি বলেন, ত্যাগী নেতাকর্মীদের হারানো দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। কিন্তু তার পরও দলকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তরুণ নেতাদের আদর্শধারণ করে কাজ করে যেতে হবে।