সেমিকন্ডাক্টর খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে চিপ জায়ান্টরা

গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) খাতে বড় অংকের বিনিয়োগ করছে সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলো। চিপ-স্বল্পতা ও বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে যাচ্ছে তারা। খবর সিএনবিসি।

উন্নত মানের সিলিকন ওয়েফার তৈরিতে আগামী তিন বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বিশ্বের বৃহত্তম চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)। গত জানুয়ারিতে তাইওয়ানভিত্তিক কোম্পানিটি জানায়, ২০২২ সালে তাদের মূলধন ব্যয় ৪৭ শতাংশ বাড়তে পারে। চলতি বছরে তারা ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে পারে। ২০২১ সালে ৩ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল টিএসএমসি। তাইওয়ানের সিঞ্চুভিত্তিক কোম্পানিটির বাজার মূলধন ৬০ হাজার কোটি ডলারের বেশি। সম্প্রতি ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সে একটি কারখানা চালুর ঘোষণা দেয় টিএসএমসি। এছাড়া জাপানে আরেকটি কারখানার নির্মাণকাজও চালু হয়।

শুধু যে টিএসএমসি বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে এমন নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য কোম্পানিগুলোও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর জায়ান্ট ইন্টেল গত মার্চে জানায়, আরিজোনায় দুটি নতুন চিপ কারখানায় ২ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে তারা। ৪০ বছর ধরেই আরিজোনায় শক্তিশালী অবস্থান ইন্টেলের। যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর ইকোসিস্টেমে আরিজোনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আরিজোনায় অন্য যে চিপ কোম্পানি রয়েছে, তার মধ্যে আছে অন সেমিকন্ডাক্টর, এনএক্সপি ও মাইক্রোচিপ।

চলতি বছরে সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্যামসাং কী পরিমাণ বিনিয়োগ করবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি। তবে গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম কোম্পানিটি জানায়, ২০২১ সালে তারা যে পরিমাণ মূলধন ব্যয় করেছে, তার ৯০ শতাংশ গিয়েছে সেমিকন্ডাক্টর খাতে। উল্লেখ্য, গত বছর স্যামসাংয়ের মূলধন বিনিয়োগ হয়েছে ৪৮ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ওন বা ৪ হাজার ১০ কোটি ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গার্টনার বলছে, উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও গবেষণায় গত বছর সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা কোম্পানি ১৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। এ খাতে মোট ব্যয়ের ৬০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করেছে বিশ্বের শীর্ষ তিন চিপ নির্মাতা টিএসএমসি, স্যামসাং ও ইন্টেল।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রেইনের সেমিকন্ডাক্টর বিশ্লেষক পিটার হ্যানবুরি সিএনবিসিকে জানান, ২০১৬-২০-এর তুলনায় ২০২১-২৫-এ সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিনিয়োগ দ্বিগুণ বাড়ছে।

সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের আরো বড় কয়েকটি নাম যেমন এনভিডিয়া, এএমডি ও কোয়ালকমকে অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের মতো বড় অংকের বিনিয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এ কোম্পানিগুলো চিপের ডিজাইন করে এবং তা তৈরিতে টিএসএমসির মতো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে যায়।

এদিকে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বড় অংকের বিনিয়োগ সত্ত্বেও এ খাতের সরবরাহ সংকট কাটেনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহারের কারণে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। চায়ের কেটলি, ওয়াশিং মেশিন থেকে শুরু করে হেডফোন ও যুদ্ধবিমানের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় চিপ ব্যবহূত হয়। গাড়ির মতো বেশকিছু পণ্যে ডজনখানেক চিপও ব্যবহার হয়।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *