সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারে সম্মত ভারত-চীন

পূর্ব লাদাখের সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে ভারত ও চীন। যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নেয়া হবে বলে উভয় দেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমস।

সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে বিবদমান দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন ও সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনা শেষে শুক্রবার সেনা সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে একমত হয় ভারত ও চীন।

১৪ জুলাই সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ হয়নি। তাই নতুন করে আরো একবার বৈঠক হয়েছে। এবারের বৈঠকে উভয় দেশই আশ্বাস দেয় যে তারা নিজেদের সেনা সরিয়ে নেবে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার নয়াদিল্লি ও বেইজিং উভয়েই সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। কিন্তু কীভাবে সেনা সরিয়ে নেয়া হবে তা নিয়ে দেশ দুটির সামরিক পর্যায়ে শিগগিরই আরো একটি বৈঠক হবে। সেখানেই এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব পূর্ব লাদাখে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে রাজি হয়েছে চীন। দুই দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী যেন শান্তি বজায় থাকে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যেন আরো উন্নত হয়, সেজন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

৫ জুলাই থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। অবশেষে দুই পক্ষই সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ৫ জুলাই প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে ফোনে কথা বলেন। সে সময় তাদের মধ্যে পূর্ব লাদাখে দুদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত ও সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমন নিয়ে আলোচনা হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অবশেষে শুক্রবার দুই দেশই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এতদিন তাদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেগুলো কার্যকর করতে হবে। এরপর উভয় দেশ ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে খুব শিগগিরই ভারত ও চীনের মধ্যে সেনা পর্যায়ের আরো একটি বৈঠক হবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, কীভাবে ও কখন সেনা সরিয়ে নেয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর ও সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে উভয় দেশকেই সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে বলে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত বৈরিতা প্রায় ছয় দশকের। ৩ হাজার ৪৪০ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ এলএসি পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশকে বিবাদে ব্যস্ত রেখেছে সেই ১৯৬২ সাল থেকে। এলএসিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত স্থল সীমান্তরেখা। সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আছে, কিন্তু সেই অর্থে যুদ্ধ বাধেনি সাম্প্রতিক কয়েক দশকে। এ সময়ে কোনো প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেনি। তবে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে দুই দেশের সেনারা প্রাণঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত হন। হিমালয়ের পশ্চিমাংশে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় গালওয়ান উপত্যকায় দুই পক্ষের সেনাদের হাতাহাতি সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনা নিহত ও অন্তত ৭৬ জন আহত হন। ওই ঘটনায় চীনা সেনারাও হতাহত হন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *