সিমাগো-স্কপাসের বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিং: গবেষণা নয়, পেছানোর কারণ উদ্ভাবন

গবেষণা, উদ্ভাবন ও সমাজের ওপর প্রভাব—তিনটি বিষয়কে ভিত্তি ধরে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একাটি তালিকা প্রকাশ করে স্পেনের সিমাগো ল্যাব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস। সিমাগো ইনস্টিটিউশনস র‍্যাংকিংস (এসআইআর) নামের এ তালিকায় কয়েক বছর ধরেই অবনমন ঘটছে দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান। গবেষণা কম হওয়ার কারণেই এমনটা ঘটছে বলে ধারণা করে আসছিলেন শিক্ষক-গবেষকরা। তবে এসআইআর জরিপ ও পদ্ধতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গবেষণা নয়; বরং উদ্ভাবন ও সামাজিক প্রভাবে পিছিয়ে থাকার কারণেই প্রতি বছর র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর গবেষণার দিক থেকে এসআইআরে প্রতি বছরই দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান সামনের দিকে যাচ্ছে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, গত কয়েক বছরে দেশের বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন র্যাংকিংয়ে জায়গা করে নিতে গবেষণায় জোর দিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। তবে সংখ্যায় বাড়লেও দেশে এখনো গুণগত গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এ কারণে ‘উদ্ভাবন’ হচ্ছে না নতুন কোনো জ্ঞান, প্রযুক্তি, পণ্য কিংবা সেবা। এজন্য সমাজেও তেমন কোনো প্রভাব নেই গবেষণার। উল্টো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গবেষণাগার কিংবা নিবন্ধেই সীমাবদ্ধ থাকছে গবেষণার ফলাফল।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, গবেষণা এক ধরনের সংস্কৃতি। এটা একদিনে গড়ে ওঠে না। ধাপে ধাপে এগিয়ে একসময় গবেষণার মাধ্যমে বড় কিছুর সৃষ্টি হয়। তবে আমাদের দেশে এখনো গবেষণার সেই সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ব্যক্তি পর্যায়ে কিছু গুণগত গবেষণা হচ্ছে ঠিক। তবে সেটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। গবেষকদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পৌঁছানোও সম্ভব হচ্ছে না। আসলে গবেষকরা অর্থের পেছনে নয়, বরং আমাদেরই গবেষকের কাছে অর্থ পৌঁছে দেয়া উচিত। কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, গবেষণার জন্য অর্থ পাচ্ছে না। অন্যদিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে গবেষণার অর্থ ব্যয় না হয়ে কোষাগারে ফেরত যাচ্ছে।
সস্ত্রীক আগাম জামিন পেলেন পিরোজপুরের মেয়র ≣ [১] বিতর্কিত বক্তা মাওলানা ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানীর রিমান্ড মঞ্জুর ≣ [১] হেফাজতকে কড়া হুঁশিয়ারি নওফেলের

উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কোলাবরেশন (সমন্বয়) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পেটেন্ট সার্টিফিকেট তো দেয়ালে টাঙিয়ে রাখার বস্তু নয়। পেটেন্টকে বাজার পর্যায়ে নিয়ে গেলেই সমাজে গবেষণার প্রভাব পড়ে। আমাদের দেশে এ সংস্কৃতিও এখনো গড়ে ওঠেনি।

গবেষণা, উদ্ভাবন ও সমাজের ওপর প্রভাব—তিনটি বিষয়ে মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে এসআইআর তৈরি করা হয়। এর মধ্যে গবেষণার জন্য ৫০, উদ্ভাবনে ৩০ ও সমাজের ওপর প্রভাবের ক্ষেত্রে ২০ নম্বর দেয়া হয়। মূল র‍্যাংকিংয়ের বাইরে তিনটি বিষয়ে আলাদা র‍্যাংকিংও প্রকাশ করে সিমাগো। সেখানে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় বেশ এগিয়েছে। তবে উদ্ভাবন ও সমাজের ওপর প্রভাব—দুটি ফ্যাক্টরে বেশ পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে মূল তালিকায়ও পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে।

২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশিত এসআইআরে জায়গা পেয়েছিল দেশের মাত্র চারটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক অবস্থান ছিল ৭৬৩তম। এরপর টানা কয়েক বছর র‍্যাংকিংয়ে সামনে এগোচ্ছিল ঐতিহ্যবাহী এ উচ্চশিক্ষালয়। ২০১৬ সালে এসে এসআইআরের বৈশ্বিক তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৬১৫তম হয়। এরপর পুনরায় তালিকায় পিছিয়ে যেতে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের এসআইআরে বৈশ্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ৭৫৪তম।

আর বিষয়ভিত্তিক দিক থেকে ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল গবেষণায় ৫৬০তম, উদ্ভাবনে ৪৩৪তম ও সামাজিক প্রভাবে ২৮তম। ২০২১ সালে এসে গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান এগিয়ে হয়েছে ৪১৪তম। অন্যদিকে উদ্ভাবন ও সামাজিক প্রভাব বিষয়ে পিছিয়ে যথাক্রমে ৫০০ ও ২৪৩তম হয়েছে। এ কারণে সর্বোপরি মূল র‍্যাংকিংয়েও পিছিয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

একইভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই উদ্ভাবন ও সামাজিক প্রভাবের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় তত্ত্বভিত্তিক কিছু গবেষণা হচ্ছে। তবে বলার মতো তেমন কোনো উদ্ভাবন হচ্ছে না। পেটেন্টকেন্দ্রিক গবেষণার সংস্কৃতিটা এখনো গড়ে ওঠেনি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *