সিনেমায় সংলাপের বিকল্প ছিল যার সংগীত

প্রয়াত হলেন সিনেমা প্যারাডাইসোর সংগীত নির্মাতা এন্নিও মরিকোনে। সার্জিও লিওনের স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন বা ইতালীয় ওয়েস্টার্ন জনরার সিনেমার সংগীত নির্মাণের জন্য কিংবদন্তি হয়ে ওঠা এন্নিও মরিকোনে গতকাল ৯১ বছর বয়সে বিদায় নিলেন। ডেজ অব হ্যাভেন, দ্য মিশন, ব্যাটল অব আলজিয়ার্স, দ্য হেটফুল এইটের মতো আলোচিত ছবিগুলোর সংগীতও তার করা।

অস্কারজয়ী এ সুরকার, সংগীত পরিচালক স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন সিনেমায় সংলাপহীন পরিস্থিতিতে তার মিউজিক দিয়ে যেভাবে উত্তেজনা, রোমাঞ্চকে সৃষ্টিশীলভাবে প্রকাশ করেছেন, তা তাকে সংগীতের ইতিহাসে বিশিষ্টতা দিয়েছে।

ইতালীয় এ মিউজিক কম্পোজার ৫০০টির বেশি সিনেমার জন্য সংগীত নির্মাণ করেছেন। বেশ কিছুদিন থেকেই তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে ভেঙেছেন পা। রোমের এক হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মরিকোনে রোমের বাসিন্দা। এ শহরেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। তার প্রথম বাদ্যযন্ত্র ছিল ট্রাম্পেট। নিজের জীবন শুরু করেছিলেন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে। খেলেছেন ইতালির বিখ্যাত ক্লাব এএস রোমায়। কিন্তু সংগীতের নেশায় ছেড়ে দেন ফুটবল। ২০১৫ সালে কোয়েন্টিন টারান্টিনোর দ্য হেটফুল এইট ছবির সংগীতের জন্য তিনি অস্কার পান। আর অস্কারে অনেকবার মনোনয়ন পেয়েছে তার কাজ।

‘দ্য মায়েস্ত্রো’ বলে পরিচিত মরিকোনেকে ২০০৭ সালে সম্মানসূচক অস্কার দেয়া হয়েছিল। এছাড়া ইতালিতে সিনেমার জন্য দেয়া সর্বোচ্চ সম্মান ডেভিড ডি ডোনাটেল্লো পেয়েছেন ১১ বার।

মরিকোনের ক্যারিয়ারে বাঁক বদল ঘটেছিল ১৯৬৪ সালে। সে বছর তার তৃতীয় সন্তান আন্দ্রেয়া মরিকোনের জন্ম হয়। আন্দ্রেয়া নিজেও পরে সংগীত পরিচালক হয়েছেন। যা হোক সে বছর মরিকোনে কাজ শুরু করেন পরিচালক সার্জিও লিওনের সঙ্গে। তার কম বাজেটের ওয়েস্টার্ন ছবিগুলোতে মরিকোনের সংগীত আয়োজন সফল হয়। শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৪ সালে আ ফিস্টফুল অব ডলারস দিয়ে। সার্জিও বলেছিলেন, ‘আমার এ ছবিগুলোতে সংগীতের ভূমিকা অবিস্মরণীয় ও অবিচ্ছেদ্য। কারণ ছবিগুলোতে সংলাপ খুব কম। এগুলোতে সংলাপের চেয়ে সংগীতই আবেগ ও অ্যাকশনকে বেশি ফুটিয়ে তুলেছে। আমি তাকে (মরিকোনে) শুটিংয়ের আগেই মিউজিক লিখতে দিতাম। এটা ছবির চিত্রনাট্যের অংশই ছিল।’

মরিকোনে তার সংগীত নির্মাণে সাধারণত কোনো একটি বাদ্যযন্ত্রকে গুরুত্ব দিতেন। তিনি তার সংগীতে হুইসেল, গির্জার ঘণ্টা, কয়োটের চিত্কার, পাখির কিচিরমিচির, ঘড়ির টিকটিক, বন্দুকের গুলি ও নারীর কণ্ঠ ব্যবহার করেছেন। প্রথাগত স্টুডিও অ্যারেঞ্জমেন্টকে তিনি ব্যবহার করেননি, তার কথায়, ‘অনুভূতি প্রকাশে সব ধরনের শব্দকেই কাজে লাগানো যায়…বাস্তব দুনিয়ার শব্দ থেকেই সংগীত তৈরি হয়।’

এন্নিও মরিকোনে জন্মেছিলেন ১৯২৮ সালের ১০ নভেম্বর। তার বাবা মারিও ছিলেন ট্রাম্পেট বাদক। ছয় বছর বয়সেই প্রথম সংগীত লিখেছিলেন মরিকোনে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *