সিউলে ষষ্ঠ চিপ কারখানা গড়ছে স্যামসাং

কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে রিমোট ওয়ার্কের চাহিদা বেড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাসায় থেকে কাজ করার সুবিধা দিচ্ছে। ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে বাসায় থেকে কাজ করতে পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি) এবং সার্ভারের চাহিদা উল্লেখযোগ্য বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে চিপের চাহিদা। যে কারণে বাড়তি চাহিদা পূরণে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ষষ্ঠতম এনএএনডি ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপ কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করেছে স্যামসাং। গত সোমবার স্যামসাং ইলেকট্রনিকস কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে নতুন চিপ কারখানার নির্মাণ শুরুর কথা বলা হয়েছে। খবর রয়টার্স।

গত মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্যামসাং স্থানীয়ভাবে চিপ উৎপাদন জোরদারে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে নিজ দেশে ষষ্ঠ চিপ প্রডাকশন লাইন নিয়ে কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে মোবাইল ডিভাইস; বিশেষ করে স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারের লজিক চিপ তৈরির পাশাপাশি মেমোরি চিপ উৎপাদন করবে প্রতিষ্ঠানটি।

বৈশ্বিক চিপ বাজার টানা কয়েক প্রান্তিক ধরে খারাপ সময় পার করছে। বাজারটিকে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে বড় ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশ্বের বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা তাইওয়ানভিত্তিক তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি (টিএসএমসি) লিমিটেডের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্ব্বী স্যামসাং। বাণিজ্য বিরোধের জেরে হুয়াওয়ের কাছ থেকে নতুন করে চিপ ক্রয়াদেশ নেয়া বন্ধ করেছে টিএসএমসি। এ পরিস্থিতিতে স্যামসাংয়ের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি চিপের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারণে সিউলে চিপ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রডাকশন লাইন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্যামসাংয়ের নতুন প্রডাকশন ফ্যাসিলিটি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াবে। আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে এক্সট্রিম আল্ট্রাভায়োলেট (ইইউভি) প্রযুক্তিতে ৫ ন্যানোমিটার চিপ উৎপাদন শুরুর প্রত্যাশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেক্ষেত্রে নতুন প্রডাকশন লাইন কাজে লাগানো হবে।

গত মাসে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে নতুন অ্যাডভান্সড চিপ উৎপাদন কারখানা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে টিএসএমসি। প্রতিষ্ঠানটির নতুন কারখানা স্থাপনের ঘোষণা আসার পর পরই নিজস্ব চিপ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে সিউলে নতুন প্রডাকশন লাইন নির্মাণের ঘোষণা দিল প্রতিদ্বন্দ্ব্বী স্যামসাং। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট পাঁচটি এবং যুক্তরাষ্ট্রে একটি চিপ উৎপাদন কারখানা পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের ওপর নতুন বিধিনিষেধ জারি করেছেন মার্কিন বিচার বিভাগ। এর আওতায় মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিপ উৎপাদন করে এমন অন্য কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লাইসেন্স নিতে হবে। যে কারণে হুয়াওয়ের কাছ থেকে চিপের নতুন ক্রয়াদেশ নেয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে টিএসএমসি। বিষয়টি স্যামসাংয়ের চিপ ব্যবসা বিভাগের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

টিএসএমসির ভাষ্যে, মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নতুন নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগে হুয়াওয়ের ক্রয়াদেশকৃত চিপ, যেগুলোর উৎপাদন এরই মধ্যে শুরু হয়েছে, তা নতুন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার প্রভাবমুক্ত থাকবে। অর্থাৎ নতুন নিষেধাজ্ঞার আগে হুয়াওয়ের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ নেয়া সব ধরনের চিপ সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। হুয়াওয়ের আগের ক্রয়াদেশকৃত চিপ আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সরবরাহ সম্পন্ন করবে টিএসএমসি।

টিএসএমসি গত ফেব্রুয়ারিতে মূলধনি ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বিশ্বব্যাপী পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনের চাহিদা ও বিক্রি বৃদ্ধি তাদের ব্যবসায় বাড়তি মুনাফা যোগ করবে। যে কারণে চলতি বছর মূলধনি ব্যয় বাড়ানোর মাধ্যমে ব্যবসা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

টিএসএমসির দাবি, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ টিএসএমসির অ্যারিজোনা কারখানা পূর্ণাঙ্গ রূপে চিপ উৎপাদনে যাবে। এটা নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় কারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে স্টেট কিংবা ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের আর্থিক প্রণোদনা পেতে যাচ্ছে টিএসএমসি। তবে প্রতিষ্ঠানটির যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনার সঙ্গে স্টেট ও বাণিজ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *