কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে যেসব খাতের ব্যবসায় উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তার অন্যতম। গ্রাহকের দোরগোড়ায় পণ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী মহামারীর শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। এজন্য সামাজিক দূরত্ব ও কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠানভেদে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। তবে এবার কর্মীদের সুরক্ষায় আরো বড় উদ্যোগ নিল ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। প্রতিষ্ঠানটি অফিস ও গুদামগুলোতে কর্মীদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। ঝুঁকি এড়িয়ে ব্যবসা পরিচালিত করতে এআইভিত্তিক এ ট্র্যাকিং সিস্টেম কার্যকর করল জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি। খবর রয়টার্স।
বিশ্বের শীর্ষ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি সময় এ উদ্যোগ নিল, যখন মার্কিন আইনপ্রণেতারা ও ইউনিয়নগুলো মহামারীর মধ্যে অ্যামাজনের কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এছাড়া এ বিষয়ে অ্যামাজনকে কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে।
অ্যামাজন বলছে, নতুন এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির অংশ হিসেবে গুদামগুলোতে মনিটর স্থাপন করা হয়েছে। যেটিতে কর্মীদের নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করতে গ্রিন সার্কেল নির্দেশ করবে। অন্যদিকে কর্মীরা খুব কাছাকাছি চলে এলে এ সময় রেড সার্কেল দেখাবে। নতুন এ প্রযুক্তির নাম দেয়া হয়েছে ডিস্ট্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্স বা দূরত্ব সহায়ক। অ্যামাজনের ভবনগুলোতেও ক্যামেরাযুক্ত এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ট্রাফিক এলাকা সহজ নির্ধারণ করতে পারেন কর্মীরা।
অ্যামাজন এটির বাইরে কর্মীদের সুরক্ষায় আরো অন্যান্য প্রযুক্তিও ব্যবহার শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পরিধানযোগ্য ডিভাইস। পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার শুরু হওয়া এ প্রযুক্তির ফলে কর্মীরা যখন একজন আরেকজনের খুব কাছাকাছি চলে আসবে, তখন এটি জ্বলে উঠবে এবং একই সঙ্গে শব্দ করে সতর্ক করে দেবে। সিয়াটলের বাইরের গুদামগুলোতে এ প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার শুরু করেছে অ্যামাজন।
কভিড-১৯ মহামারীর ফলে নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা চালিয়ে যেতে অ্যামাজনকে কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে অনেক বেশি নজর দিতে হচ্ছে। এমনকি এ বিষয়ে আইনি জটিলতাও মুখোমুখি হতে পারে। যে কারণে কর্মীদের সুরক্ষায় যা যা করা যায়, সেটি করতে চেষ্টার ত্রুটি করছেন না অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস।
বিশ্বের শীর্ষ এ ধনকুবের কেবল প্রযুক্তি ব্যবহার করেই দায়িত্ব শেষ করছেন না। কর্মীদের কঠোরভাবে এটি মেনে চলা নিশ্চিত করতে বিষয়টি দেখভালে আলাদা লোকবলও নিয়োগ দিচ্ছে। অ্যামাজনের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির এমন কিছু ডাটা বিশ্লেষণ করেছে রয়টার্স। যেখানে দেখা যাচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে অ্যাম্বাসেডর এবং গার্ডিয়ান্স নামে লোকবল নিয়োগ দিচ্ছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি। যাদের দায়িত্ব হবে গুদামগুলোতে বারবার নিরীক্ষণ করা। যাতে কর্মীরা বিশ্রাম কক্ষে নির্ধারিত সংখ্যার বেশি বসতে না পারে। যদিও এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করেনি অ্যামাজন। তবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে অ্যামাজন এমন প্রযুক্তি ব্যবহারকারী হিসেবে প্রথম প্রতিষ্ঠান নয়। বরং এর আগেও অনেক প্রতিষ্ঠান এমন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে এআই প্রযুক্তিভিত্তিক ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করেছে। অনেক ফার্ম জানিয়েছে, এআই ক্যামেরাভিত্তিক সফটওয়্যার কেবল প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, বরং এটি নিয়ন্ত্রক এবং অন্যান্য সংস্থার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তারাও নিরাপদ দূরত্বের বিষয়টি কতটুকু মানা হচ্ছে, সেটি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং প্রয়োজনে এটি মানতে চাপ দিতে পারেন।