সংক্রমণ বাড়লেও চাপ কম হাসপাতালে

বেড়েছে সংক্রমণ। রোগী আসাও বেড়েছে হাসপাতালে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
অ- অ অ+

রাজধানীসহ সারা দেশে করোনা শনাক্তের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার শনাক্তের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়েছে। তবে সংক্রমণের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে এখনো রোগীর চাপ কম। সাধারণ বেডের পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালে খালি রয়েছে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ও এইচডিইউ শয্যা। গতকাল রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা ও মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রামের কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

kalerkanthoঢাকা মেডিক্যাল : গতকাল দুপুর পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা সন্দেহে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১১। আগের ভর্তি ২৮৬ রোগীসহ ২৯৭ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৫ জানুয়ারি ২৬, ১৬ জানুয়ারি ৩৮ ও ১৭ জানুয়ারি ৩৫ রোগী ভর্তি হয়। করোনা রোগীদের ২০টি আইসিইউর মধ্যে ১৪টিতে রোগী আছে। এখনো খালি ছয়টি শয্যা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে করোনার লক্ষণ নিয়ে আসা সবাইকে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। এক রোগীর স্বজন জলিল আহমেদ বলেন, ‘কেরানীগঞ্জ থেকে ছোট বোনকে এনেছি। এই করোনা আমার পরিবারের বড় ভাইকে কেড়ে নিয়েছে। তখন হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেছি, কোথাও চিকিৎসা পাইনি। এখন সেই পরিবেশ নেই।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে আইসিইউ, এইচডিইউসহ প্রায় ৯০০ শয্যা করোনা ডেডিকেটেড করা হয়। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি করোনা ইউনিটে রোগী ভর্তি ছিল ১৬২, ২ জানুয়ারি ১৫৭, ৩ জানুয়ারি ১৬৬, ৪ জানুয়ারি ১৭১ ও ৫ জানুয়ারি ১৬৪ জন। বাড়তে বাড়তে গতকাল পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯৭ জন। শুরুর দিকে সব আইসিইউ বেড ফাঁকা থাকলেও এখন রোগী বাড়ছে।

মুগদা জেনারেল হাসপাতাল : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ঝুনু নামের এক নারী বলেন, ‘ঠাণ্ডা লাগছে, জ্বর, গলার মইধ্যে ব্যথাও আছে। পোলারা জোর কইরা হাসপাতালে নিয়া আইছে। ডাক্তাররা কইছে সমস্যা নাই, এমনে ঠিক হয়ে যাইব।’

হাসপাতালের ১১ তলায় গিয়ে দেখা যায়, করোনা রোগীদের কেবিনে রেখে চিকিৎসা চলছে। চলতি সপ্তাহের রবিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে ২৬ জন। এ সময় একজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনার ১০০ শয্যার বেশির ভাগই খালি। এ ছাড়া ২৫টি আইসিইউ বেডের পাঁচটি করোনা রোগীদের জন্য রাখা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত চারটিতে রোগী ভর্তি ছিল।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওমিক্রনের প্রস্তুতি রয়েছে। রোগীর চাপ অনুযায়ী বেড বাড়ানো হচ্ছে। প্রয়োজনে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ বাড়ানো যাবে।’

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল : সূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ৫৮ রোগী ভর্তি ছিল। এ ছাড়া আরো ২১ জনের করোনা সন্দেহ করা হচ্ছে। হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ রয়েছে। এর মধ্যে সাতটিতে রোগী আছে। এ ছাড়া ১৫টি এইচডিইউ শয্যার ১২টিই খালি।

কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালে করোনার শুরুর চাপ সামলাতে ৩৫০ থেকে ৪০০ সাধারণ শয্যা ছিল। বর্তমানে ২৭৫ শয্যার ১৩৯টিই খালি।

চট্টগ্রামের হাসপাতাল : গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগরের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ করোনা রোগী ভর্তি হয়। একই সময়ে নগর ও জেলায় নতুন করে ৭৩৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, চট্টগ্রামে ১০ দিন ধরে সংক্রমণ বাড়লেও হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার কম।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনা রোগীদের চিকিৎসায় চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, সংক্রমণ বাড়লেও হাসপাতালে তেমন চাপ নেই। আগামী এক সপ্তাহ দেখে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

পাঁচ মাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ

দেশে এক দিনে করোনা শনাক্তের হার আট হাজার ছাড়াল। গত পাঁচ মাসের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২৩.৯৮ শতাংশ। এক দিনের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী ছাড়া সব জেলায় কভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময় দেশে কভিডে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৪ জনের। বিপরীতে শনাক্ত হয়েছে আট হাজার ৪০৭ জন। এর মধ্যে মহানগরীসহ ঢাকা জেলায় ছয় হাজার ৩০৩ জন, যা দেশে মোট শনাক্তের প্রায় ৭৫%।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত কভিড শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৪। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের মৃত্যু নিয়ে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ১৬৪ জনের। মৃত ১০ জনের মধ্যে সাতজনেরই মৃত্যু হয় ঢাকায়।

ওমিক্রন গুণিতক আকারে বাড়ার শঙ্কা : কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রন গুণিতক আকারে বাড়ার আশঙ্কা করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষকরা। তাঁদের ধারণা, দেশে বর্তমান কভিড সংক্রমিতদের ২০ শতাংশ ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছে। বিএসএমএমইউ উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল কভিড-১৯-এর ৭৬৯টি জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত সোমবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা করেছিল। গত মাসের প্রথম দিকেও দেশে করোনা শনাক্তের হার ১ শতাংশের ঘরে ছিল। এখন প্রতিদিনই সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ডা. শারফুদ্দিন বলেন, ‘গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত ৪০টি নমুনার ২০ শতাংশই ওমিক্রন এবং ৮০ শতাংশ ডেলটা ধরন পাওয়া যায়। পরের মাসে এই ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা করা যাচ্ছে।’

অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, তাঁদের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে পাওয়া কোনো কোনো ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর দুই ডোজ টিকা দেওয়া ছিল। তা ছাড়া গবেষণায় তৃতীয়বারের মতো সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *