শুটিং চলাকালে বারবার সবকিছু জীবাণুমুক্ত করছিলাম

চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে ছোট পর্দার শুটিং। অভিনয়শিল্পীদের কেউ কেউ কাজ আরম্ভ করছেন। অনেকেই আবার পরিস্থিতি আরেকটু পর্যবেক্ষণ করে তবে কাজে নামবেন বলে চিন্তা করছেন। যারা কাজ শুরু করেছেন তাদের মধ্যে অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমিও রয়েছেন। হিমি বলেন, ‘এ মাস থেকে কিছু কাজ শুরু করেছি। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নির্মিত “বাতিঘর” নামে একটি নাটকে কাজ করেছি।’ নাটকের গল্পটা কেমন জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘গ্রামের একটি মেয়ে যার নাম আলেয়া। সে বাল্যবিবাহ রোধে নারীদের সচেতন করা, নারীদের গর্ভকালে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া—এ ধরনের সচেতনতামূলক কাজগুলো নিজের থেকে করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাম থেকে তাকে এসব কাজের স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ রকম একটা গল্প নিয়ে কাজ করি। সহশিল্পী ছিলেন শ্যামল মওলা।’

এছাড়া নাটকটিতে বড়দা মিঠু, দীপা খন্দকারসহ আরো অনেককেই দেখা যাবে বলে তিনি জানান। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন নির্মাতা তাহের শিপন। শুটিং হয়েছে পুবাইলে। করোনাকালে শুটিং, তাই কতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করেছেন এমন প্রশ্নে হিমির উত্তর, ‘যতটা সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করে কাজ করেছি। করোনার কারণে এর আগে অনেক কাজ বাদ দিয়েছি। শুটিং চলাকালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সব উপকরণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নিশ্চয়তা দেয়া হয় টিম থেকে। আর আমি নিজেও স্যানিটাইজার রেখেছিলাম সবসময়। বারবার জীবাণুমুক্ত করে নিচ্ছিলাম সবকিছু।’

‘নিজের মেকআপ নিজে করা। যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা। এ বিষয়গুলো খেয়াল রেখে কাজ করেছি। আমি চেষ্টা করছি কম কাজ করার। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের শুটিংগুলো। যদিও এটা পুবাইলে ছিল। চেষ্টা করছি সামনের কাজগুলো ঢাকার ভেতরে করার’—তিনি যোগ করেন।

এভাবে শুটিং করা কতটা চ্যালেঞ্জের ছিল? ‘আমরা তো মাস্ক পরে অভিনয় করতে পারি না। কিছুটা ঝুঁকি নিজের থেকে নিতেই হয়েছে। নাটকে অনেক কলাকুশলী ছিল। গল্পটা কম কলাকুশলী নিয়ে করা যেত না। যেহেতু নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে, প্রতিটি দৃশ্যে দেখা যায় যে নতুন কোনো চরিত্রের বাসায় যেয়ে যেয়ে আমি অনেক কিছু বোঝাচ্ছি। এ বিষয়গুলো একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল।’

এ কাজটির পাশাপাশি হিমি আরো একটি নাটকে অভিনয় করেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নন্দিনী’ নামে একটি রোমান্টিক ধাঁচের নাটকে কাজ করেছি। এটার শুটিং হয়েছিল উত্তরায়। সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন আব্দুর নূর তুষার। নাটকটি পরিচালনা করেছেন ফরহাদ ফয়সাল।

ভুল বোঝাবুঝি থেকে দূরত্ব। অতঃপর অনেক বছর পরে দেখা প্রেমিক-প্রেমিকার। একপর্যায়ে প্রেমিকা বুঝতে পারে তখন তার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল—এ রকম একটি গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। লকডাউনের একেবারে আগ মুহূর্তে এ নাটকটির কাজ করেছেন হিমি।

সামনে আবারো একটা ঈদ। গত ঈদে হিমির বেশকিছু কাজ প্রচারিত হয়েছে। এবারের কোরবানির ঈদকে ঘিরেও নতুন কোনো কাজের পরিকল্পনা আছে কি? একটা প্রজেক্টের কাজ রয়েছে বলে তিনি জানালেন। মূলত এটার মধ্য দিয়েই কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইলেন না। বললেন, ‘এটা দর্শকদের জন্য আকর্ষণ হিসেবেই থাকুক।’ তবে এর গল্পটা তার বেশ পছন্দের এটুকু জানাতে ভুললেন না।

ঈদ নিয়ে সবারই অনেক পরিকল্পনা থাকে। এ সময়টা খুব ব্যস্ততা থাকে শিল্পীদের। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সে আমেজ অনেকখানি কমে গেছে। এখন চিন্তা কেবল নিরাপদ থাকা। হিমি বলেন, ‘এ মাসে টিভিসি, নাটক অনেক কাজের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে অল্প কিছু কাজ করেছি। কতটা নাটকে কাজ করব, কোন চ্যানেলে যাবে আগে ঈদ এলে এসব নিয়ে উৎসাহ কাজ করত। কিন্তু এখন সেগুলো নেই। আগে হয়তো গল্পের কথা জানতে চাইতাম। এখন সবার আগে কতজন আর্টিস্ট সেটে কাজ করছেন, ইনডোরে না আউটডোরে শুটিং হবে, নিরাপদে শুটিংয়ের প্রস্তুতি কেমন—এসব শুনে নিই।’ তার মতে, ‘দেখা গেল আমি হয়তো সতর্কতা অবলম্বন করছি। কিন্তু বাকিরা সেগুলো মেনে চলছে না। মাস্ক পরছে না। আবার মেকআপম্যান বা অন্য কেউ আক্রান্ত হলে সেখান থেকে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।’

এগুলো ভেবে পরবর্তী সময়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের ইচ্ছা হিমির। তবে তার ভক্তদের একেবারেই হতাশ হওয়ার কারণ নেই। কারণ আসন্ন ঈদে তার নতুন কাজ প্রচারিত হবে। অভিনেত্রী নিজেই এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আগের ঈদে রোজায় একদমই বের হইনি। নতুন কোনো প্রজেক্টের কাজ করিনি। সব পুরনো নাটক সম্প্রচারিত হয়েছে। তবে এবার নিরাপত্তা, বর্তমান অবস্থা সবকিছু মাথায় রেখে কিছু কাজ করছি।’ 

অভিনয়ের পাশাপাশি সংগীতেও বিচরণ রয়েছে হিমির। অভিনয়শিল্পী নয় বরং ছোটবেলা থেকে সংগীতশিল্পী হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। এ লকডাউনে বেশ কয়েকটি গান হারমোনিয়ামে তুলেছেন। কোন ধরনের গান গাইতে পছন্দ করেন? ‘আমি নজরুলসংগীত শিখতাম। এখন আধুনিক গানগুলোও শিখছি। রক অ্যান্ড রোল ধরনের গান করি না। আমার ট্র্যাডিশনাল গানই পছন্দ।’ গান নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তার উত্তর, ‘ভবিষ্যতে ক্ল্যাসিক্যাল গান নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা আছে। আমার গুরুরা যেমন ফেরদৌস আরা ম্যাম খুবই অনুপ্রেরণা দেন, যাতে গান নিয়ে কিছু করি সামনে।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *