লিটন-মিরাজের ব্যাটে লড়াই

ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৪০৯ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে ৭১ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তাই দ্বিতীয় শেষ হয় স্বগাতিকদের ফলোঅন পড়ার শঙ্কা নিয়ে। অপরাজিত থাকা দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম ও মোহাম্মদ মিঠুন আশা হয়ে লড়াই শুরু করেন তৃতীয় দিনও। তাদের অবিচ্ছিন্ন ৭১ রানের জুটি যখন আশা দেখাচ্ছিল ঠিক তখনই তা ভেঙে যায় মিঠুনের বিদায়ে। মুশফিক যখন বাজে শটে আউট হন তখনও ফলোঅন এড়াতে প্রয়োজন ৪৫ রানের। সেখান থেকে মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন দাসের ১২৬ রানের জুটি দলের মান রক্ষা করে। তবে দেশের ক্রিকেটে ৭ম উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ এই জুটি ভাঙার পর তাসের ঘরের মত গুড়িয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। চা বিরতির পর মাত্র ১৫ রানে শেষ চার উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
২৯৬ রানে গুটিয়ে যায় দল। তাতে ১১৩ রানের লিড পায় সফরকারীরা। ৭৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে মুমিনুল হকের দলকে বড় ধাক্কা দেন অফ স্পিনার রাকিম কর্নওয়াল। এগিয়ে থেকেই শেষ বিকালে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নামে ক্যারিবীয়রা। তবে ৪১ রান তুলতেই হারায় ৩ উইকেট। এখনো টেস্টে সম্ভাবনা জাগাতে বাংলাদেশকে পারি দিতে হবে অনেকটাই পথ।

তৃতীয় দিন ৬১ বলে ৬ রানে অপরাজিত থাকা মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন মুশফিকুর রহীম। নতুন দিনে দুজনের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল দারুণ প্রত্যয়ী। বিশেষ করে মিঠুন ৮৬ বলে ১৫ রান করে দিচ্ছিলেন ধৈর্য্যের পরিচয়। কিন্তু কর্নওয়ালের বলে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার লড়াই। ভাঙে ৭১ রানের জুটি। কিন্তু তখনো দলের ভরসা মুশফিক। ২৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা দেশের এই ব্যাটিং ভরসা ফিফটি স্পর্শ করেন ৮৯ বলে। পুরো সময়টাতে তাকে ঘাবড়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন ক্যারিবীয় বোলাররা। কিন্তু কর্নওয়ালের বলে রিভার্স সুইপ করতে যান মুশফিক। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় কভার অঞ্চলে। ১০৫ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটি শেষ হয় আত্মহত্যার এক ক্যাচ দিয়ে। সেখান থেকে অলোঅন এড়ানোর লড়াই শুরু করেন লিটন ও মিরাজ। আর কোনো বিপদ না বাড়িয়ে তারা মধ্যাহ্নবিরতিতে যান। দ্বিতীয় সেশনেও তারা থাকেন অবিচল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলতি সিরিজে ২৭ ওভারে ৯১ রান তোলেন তারা দু’জন। ধারণা করা হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত দু’জনের বড় ইনিংসে ক্যারিবীয়দের ছুঁয়ে ফেলবে স্বাগতিকরা। কিন্তু তৃতীয় শেসনে বদলে যায় সব কিছু। কর্নওয়ালের সাদামাটা এক ডেলিভারিতে ভাঙে মিরাজ-লিটনের জুটি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল প্যাডেল সুইপ করতে চেয়েছিলেন লিটন, বল উইকেটের পিছনে আকাশে উড়ে যায়। লেগ স্লিপের দিকে দৌড়ে জার্মেইন ব্ল্যাকউড ক্যাচ লুফে নেন। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। ৭ চারে ১৩৩ বলে ৭১ রান করে থামে লিটনের লড়াই। তবে এই রান করার পথে টেস্টে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। সেখান থেকেই মরক লাগে টাইগারেদর প্রথম ইনিংসে। ব্যাট হাতে এসে নাঈম হাসান মাত্র তিন বল খেলে আউট হন। একবার জীবন পেয়ে পরের বলেই নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে আসেন এই অফস্পিনরার। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট পেলেন কর্নওয়াল। এরপর আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মিরাজ পা দেন ক্যারিবীয় পেসার গ্যাব্রিয়েলের ফাঁদে। তার বল কাভারে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ৬ চারে ১৪০ বলে ৫৭ করে বিদায় নেন মিরাজ। এরপর দু’বার জীবন পাওয়া তাইজুল অপরাজিত থাকেন ১৩ রানে। আলজারি জোসেফের বলে আবু জায়েদ গালিতে ক্যাচ দিলে থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টাইগাররা একই ইনিংসে ১০ উইকেট হারানোর রেকর্ড গড়ে শুধু ক্যাচ দিয়ে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *