রফতানিমুখী গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প খাত বাজেটে বঞ্চিত

সরকার নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারীজনিত সংকট বিবেচনা করে বাজেট ঘোষণা করলেও শতভাগ রফতানিমুখী ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকৃতির গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প খাতটি বরাবরের ন্যায় কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। গতকাল প্রস্তাবিত বাজেট ২০২০-২১-এর প্রতিক্রিয়ায় এ মত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)।

ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ নিয়ে গতকাল পাঠানো বিজিএপিএমইএর প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, জীবন ও জীবিকা সচল রাখার স্বার্থে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার ব্যতিক্রমধর্মী বাজেট সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থমন্ত্রী কর্তৃক জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। আশা করি, ঘোষিত বাজেট কভিড-১৯ জনিত কারণে কর্মহীন মানুষ ও সামাজিক নিরাপত্তারবষ্টনীভুক্ত মানুষসহ সব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত সব শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

কভিড-১৯-এর মহামারীজনিত জাতীয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকালে স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তার নিশ্চয়তায় পরিস্থিতি ও বাস্তবধর্মী বাজেট উপস্থাপন করায় অর্থমন্ত্রী তথা সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিজিএপিএমইএ সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান স্বাক্ষরিত প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, সরকার কভিড-১৯ মহামারীজনিত সংকট বিবেচনা করে বাজেট ঘোষণা করলেও শতভাগ রফতানিমুখী ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকৃতির গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প খাতটি বরাবরের মতো কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটি একটি শতভাগ রফতানিমুখী খাত। উৎপাদিত পণ্যের শতভাগই ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে দেশীয় অন্যান্য রফতানিকারী খাতের অনুকূলে সরবরাহ হয়। জাতীয় রফতানি নীতি, বস্ত্র নীতি ও শিল্প নীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রফতানিকারকদের জন্য সমসুযোগের বিধান নির্ধারিত হলেও এ সেক্টর কোনো সময়ই সমসুবিধা প্রাপ্ত হয়নি।

বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স অন্যান্য রফতানিকারক খাতের ন্যায় ১০-১২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করলেও ঘোষিত বাজেটে তা আগের ৩৫ থেকে কমিয়ে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে—এমন তথ্য জানিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আমরা করপোরেট ট্যাক্স ১২ শতাংশ নির্ধারণের সংশোধিত প্রজ্ঞাপনের আবেদন জানাচ্ছি। এ সেক্টরের সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকৃতির। কভিড-১৯ জনিত কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রকৃতির শিল্পপ্রতিষ্ঠানই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিধায় আমরা উেস কর বিগত বছরগুলোর মতো শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ধার্য করে প্রজ্ঞাপনের আবেদন জানাচ্ছি, যা ঘোষিত বাজেটে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত ব্যবসায়িক দুর্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সব সেক্টর বিশেষ আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। অথচ শতভাগ রফতানিমুখী গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং সেক্টর পোশাক শিল্প বা অন্যান্য শিল্প খাতের মতো সুনির্দিষ্ট কোনো আর্থিক সহায়তাপ্রাপ্ত হয়নি—এমন তথ্য উল্লেখ করে প্রতিক্রিয়ায় বিজিএপিএমইএ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধে আর্থিক সংকটে রয়েছে। এ সেক্টরের উৎপাদিত সব পণ্যই অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে অন্যান্য রফতানিকারী খাত, বিশেষত পোশাক খাতে সরবরাহ হয়ে থাকে।

পোশাক খাতের উৎপাদিত পণ্যে এ খাতের অংশীদারিত্ব ১৫-১৮ শতাংশ, অর্থাৎ পোশাক খাতের রফতানি আয়ে এ খাতের শেয়ার ১৫-১৮ শতাংশ—এ তথ্য জানিয়ে বিজিএপিএমইএ বলছে, পোশাক খাতের আর্থিক প্রণোদনা আগে ৪ শতাংশ ছিল, যা গত অর্থবছরে অতিরিক্ত আরো ১ শতাংশ বর্ধিত করা হয়েছিল। পোশাক খাতে ওই প্রণোদনা ঘোষিত বাজেটে বহাল রাখা হয়েছে। অথচ এ সেক্টর পোশাক খাতের পরিপূরক হলেও কখনই রফতানি প্রণোদনা প্রদান করা হয়নি। তাই নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত দুর্যোগে আর্থিক সংকটের বিষয়টি বিবেচনা করে এ খাতের অনুকূলে অভ্যন্তরীণ রফতানির বিপরীতে ১ শতাংশ রফতানি প্রণোদনা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *