রংপুর অঞ্চলের বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পানির মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণে

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ভু-পরিস্থ পানির সর্বত্তম ব্যবহার এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণে ব্যপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।বিএমডিএ রংপুরের ইআইআরপি প্রকল্প পরিচালক কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রনালয়ের অধীনে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলার ৩৫ টি উপজেলায় ”ভূ-পরিস্থ পানির সর্বত্তোম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের” (ইআইআরপি) এর আওতায় ব্যপক পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছর মেয়াদী এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করা হবে ২শ ৫০ কোটি ৫৬ লাখের বেশী টাকা।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং (ইআইআরপি) প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছেন, প্রকল্পের আওতায় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা এবং লালমরিহাট এই ৫ জেলার ৩৫ টি উপজেলার বিভিন্ন হাজা-মজা পরিত্যাক্ত খাল, বিল, পুকুর পুনঃ খননের মাধ্যমে এসবের ভু-পরিস্থ পানির সর্বত্তম ব্যবহার এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আগামী ৫ বছরে ২৩০ কিলোমিটার র্দীঘ বিভিন্ন খাস খাল, খাড়ী, ১১ টি বিল এবং ১১৮ টি পুকুর পুনঃখনন করে এসবের সঞ্চিত এবং ধারণকৃত পানির সাহায্যে প্রায় ১০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া ১৩০টি এলএলপিতে ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভু-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ করে সেচের পানির অপচয় রোধের মাধ্যমে কৃষকের সেচ কাজে ব্যয় হ্রাস সহ দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে।

একই সাথে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ২ লাখ ৩০ হাজার বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ এবং ঔষধী গাছের চারা রোপন করে পরিবেশ বান্ধব ভু-কাঠামো গড়ে তোলাসহ অতিরিক্ত বনজ সম্পদ সৃষ্টি এবং পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক ভুমিকা পালন ও পুষ্টিমান বৃদ্ধি করা হবে। এর আওতায় বিদ্যমান জলাবদ্ধতা দূর করে আরও ৩৫০ হেক্টর অনাবাদী পরিত্যাক্ত জমি বিভিন্ন ফসল চাষের উপযোগী করা সম্ভব হবে। এছাড়া সৌরশক্তি চালিত পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প পানিগ্রাহী ফসল সবজি উৎপন্নের ব্যবস্থা করে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকায় নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আর্থসামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত করা হবে। কর্মসুচীর আওতায় প্রকল্প এলাকায় ২ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর শক্তি চালিত এলএলপি ৩০টি, বিদ্যুৎ চালিত এলএলপি ১০০টি এবং ৫০টি পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প পানি-গ্রাহী ফসল চাষের ব্যাপক পরিকল্পনাও রয়েছে। পাশাপাশি এই প্রকল্পের অধীনে ৫ জেলায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১০ টি নিজস্ব বিভাগীয়, রিজিয়নাল এবং জোনাল অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে।
[১] বাংলাদেশে মেসেঞ্জার সেবা বিপর্যয় নিয়ে ফেসবুকের উদ্বেগ প্রকাশ ≣ [১] উদ্ধার হওয়া ১১৫ বছরের বৃদ্ধর খোঁজ নিলেন সিএমপি কমিশনার ≣ য‌শো‌রে সা‌বেক ছাত্রলীগ নেতার আত্মহত‌্যা

চলতি অর্থ বছরে এসব জেলায় প্রকল্পের চলমান কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শালমারা খাল, বদরগঞ্জ উপজেলার মরা তিস্তা ও ঘৃনাই নদী, পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা খাল, কুড়িগ্রমের নাগেশ্বরী উপজেলার বোয়ালের দাড়া খালসহ ১৮ কিলোমিটার খাল, প্রায় ২৬ একর আয়তনের রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ষষ্ঠি ছড়ার বিল এবং বদরগঞ্জ উপজেলার ভাড়ারদহ বিল সহ ১২ টি পুকুর খনন, ১০ টি বিদ্যূৎ চালিত ও ১০টি সৌর চালিত এলএলপি স্থাপন, ২০ কিলোমিটার র্দীঘ ২০টি ভু-গর্ভস্থ সেচনালা নির্মান, ১০টি পাতকুয়া নির্মান, ৪০ হাজার বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ এবং ঔষধী গাছের চারা রোপনের কর্মসুচী বাস্তবায়ন কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৫০০ হেক্টর অনাবাদী জমি ইতোমধ্যে সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। অবশিষ্ট কাজ এ বছর জুন মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এছাড়াও রংপুর জেলার বদরগঞ্জ ও পীরগাছা এবং গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরে ৩ টি অফিস ভবন নির্মাণ কার্যক্রম বর্তমানে প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে তারা স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী মহলের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হচ্ছেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারী খাস জলাশয় অবৈধভাবে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে লিজ নিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ রেখে চাষীদের সেচ সংকটের মুখে রেখেছে। এসব প্রভাবশালী ব্যক্তির বাধা সৃষ্টির ফলে চলমান খাল খনন কাজে কিছুটা ব্যঘাত ঘটছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং ইআইআরপি প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান খান জানান, নদী মাত্রিক বাংলাদেশের অসংখ্য খাল-বিল-পুকুর বিভিন্ন এলাকায় জালের মত ছড়িয়ে আছে। কালের অতিতে এসব জলাভুমি স্থানীয় ভাবে ভু-পরিস্থ পানির আঁধার হিসেবে ব্যাবহার হত। কালের পরিক্রমায় সে সব এখন ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ এবং ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে অতিবৃষ্টি এবং অকাল আকস্মিক বন্যায় জনজীবনে র্দুভোগ এবং পানির দ্রুত নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যপক ফসল হানীর ঘটনা ঘটছে। এ দুর্যোগ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিএমডিএ এর ইআইআরপি প্রকল্পের উদ্যোগে এসব খাল-বিল-পুকুর খননের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ ও নদীর পানির নব্যতা সৃষ্টির মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ তৈরি করা হবে।

এছাড়া প্রতি কিলোমিটার খালের সঞ্চিত পানি দ্বারা খালের পার্শ্ববর্তী এলাকার ১০০ হেক্টর জমিতে সম্পুরক সেচ সহ হাজার হাজার হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত সেচসুবিধা দেয়া যাবে। এর ফলে ভু-উপরিস্থ পানি জৈব সার মিশ্রিত হওয়ায় ফসল উৎপন্নও বৃদ্ধি পাবে। এসব পানির আঁধারে সেচ সুবিধা সম্প্রসারনের পাশাপাশি খাল-বিল-পুকুর পাড়ে বিভিন্ন জাতের গছের চারা রোপন, মৌসুমী বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ, গবাদী প্রাণীর বিভিন্ন উন্নত জাতের ঘাষ চাষ ছাড়াও হাঁস ও মাছের চাষ সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকায় অধিক পরিমান ফসল উৎপন্ন ছাড়াও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যপক সাফল্য অর্জিত হবে। খনন কাজ শেষ হলে বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পানি প্রবাহের মাধ্যমে খাল-বিলে নাব্যতার প্রাণ ফিরে পাবে। এছাড়া পানির আঁধার সমূহে ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি সহ পানি নিস্কাশনের পথ সুগম ও সঞ্চিত পানির সাহায্যে বির্স্তীন এলাকা সেচের মাধ্যমে ফসল চাষের উপযোগী হবে। একই সাথে এর মাধ্যমে ভু-গর্ভস্থ্য পানির স্তর পুর্নভরনে অগ্রনী ভুমিকা রাখবে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সৌর শক্তি চালিত ৮০ টি সেচযন্ত্র স্থাপনের ফলে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৭০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে সেচ কাজে পরিবেশ বান্ধব আবহ সৃষ্টি এবং বিদ্যুতের উপর চাপ হ্রাস সহ পানির অপচয় রোধ, সেচ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ব্যয় হ্রাস পাবে। এর ফলে ”ব-দ্বিপ পরিকল্পনা ২১০০”র অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ভুমিকা রাখা সহ ২০৩০ সালের মধ্যে ভু-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ৩০ শতাংশে উন্নিত করতে সহায়ক হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *