যে গর্ব শুধুই বায়ার্নের

বায়ার্ন মিউনিখই ইউরোপের রাজা। একের এক ম্যাচে দাপুটে নৈপুণ্য দেখিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জিতলো জার্মান দলটি। রোববার ফাইনালে ফরাসি জায়ান্ট প্যারিস সেইন্ট জার্মেইকে (পিএসজি) ১-০ গোলে হারায় তারা। ম্যাচের ৫৯তম মিনিটে বায়ার্নের জয়সূচক গোলটি করেন কিংসলে কোমান।
গত নভেম্বরে বায়ার্ন মিউনিখ ছিল বুন্দেসলিগার পয়েন্ট তালিকার চারে। আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে ৫-১ গোলে হারের লজ্জাও জুটেছিল তখন। সুবাদে বরখাস্ত হলেন প্রধান কোচ নিকো কোভাচ। সহকারী কোচ হ্যানসি ফ্লিক পেলেন প্রধান কোচের দায়িত্ব। ফ্লিক শুধু দলের চেহারাই ফেরাননি; বায়ার্নকে বানিয়েছেন অপ্রতিরোধ্য।
সেই বায়ার্নই ইতিহাস গড়ে জিতে নিলো চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা। রোববার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইকে (পিএসজি) ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করে বায়ার্ন মিউনিখ। ইতিহাসের প্রথম ক্লাব হিসেবে আসরের সবগুলো ম্যাচ জিতে ইউরোপ সেরার মুকুট পরেছে বাভারিয়ানরা।
আসরের সবেচেয়ে বেশিবার (১৩) শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তারাও পারেনি এমন কৃতিত্ব দেখাতে। পারেনি দ্বিতীয় ৭ বারের চ্যাম্পিয়ন এসি মিলানও।
চ্যাম্পিয়ন্স লীগে বেশ কয়েকটি ক্লাব অবশ্য অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বায়ার্নের আগে শেষবার এমন কৃতিত্ব দেখায় স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। বায়ার্ন মিউনিখ তাদের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ মিশন শুরু করে রেডস্টার বেলগ্রেডকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে। গ্রুপপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টটেনহ্যামকে ৭-২ গোলে হারায় বায়ার্ন। এছাড়া অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে ৩-২ ও ২-০, রেড স্টার বেলগ্রেডের বিপক্ষে ৬-০ ও টটেনহ্যামের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয় পায় তারা। শেষ ষোলোতে চেলসির বিপক্ষে দুই লেগে তাদের জয় যথাক্রমে ৩-০ এবং ৪-১ গোলে। এক লেগের কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনাকে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত করার পর সেমিতে অলিম্পিক লিঁওকে পরিষ্কার ৩-০ ব্যবধানে হারায় হ্যানসি ফ্লিকের দল। পিএসজির বিপক্ষে ফাইনালে জয়ের ব্যবধানটা ১-০ গোলের।
কৃতিত্বটা নেপথ্য কারিগর ৫৫ বছর বয়সী কোচ হ্যানসি ফ্লিকেরও। জার্মানি জাতীয় দলে ২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা ছাড়া কোন দলকে সামলানোর অভিজ্ঞতা ছিল না তার।
ফাইনাল শেষে ফ্লিক বলেন, ‘আমি এই দলটা নিয়ে খুব গর্বিত। মনে আছে, নভেম্বরে যখন শুরুটা করি, পত্রিকার শিরোনামগুলো আমার চোখে পড়েছিল। তারা বলেছিল, বায়ার্ন এখন আর ভয় পাওয়ার মতো দল নয়। এই দলটার অবস্থা এখন ভয়াবহ। ওই সময়ের পর থেকেই আমাদের পথচলাটা ছিল রোমাঞ্চকর। আমরা সব কিছুরই সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছি। তিনটা শিরোপা জেতা কখনোই সহজ কাজ নয়। আসলে এটা কঠোর পরিশ্রমেরই ফসল। আপনারা দেখেছেন শীতকালে আমাদের দলের মাঝে কী পরিমাণ একাগ্রতা ছিল। কোচ হিসেবে অবশ্যই যে কেউ এমনটাই চাইবে। পুরো দলটারই ক্ষুধা রয়েছে, যার কোনও সীমানা নেই।

ফাইনাল শেষে রেকর্ড বইয়ে উঠলো যা
৬: ষষ্ঠবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জিতলো বায়ার্ন মিউনিখ। জার্মান জায়ান্টরা ছুঁয়ে ফেললো লিভারপুলকে (৬)। এই দুই দলের চেয়ে বেশি ইউরোপ সেরার মুকুট পড়েছে কেবল রিয়াল মাদ্রিদ (১৩) ও এসি মিলান (৭)।
৩০ ও ২১: নিজেদের শেষ ৩০ ম্যাচ অপরাজিত থেকে ২০১৯-২০ মৌসুম শেষ করলো বায়ার্ন মিউনিখ। যার মধ্যে ২৯টিতেই এসেছে জয়, ১টিতে ড্র। আর সব প্রতিযোগিতা মিলে শেষ ২১ ম্যাচই তারা শেষ করলো জয় দিয়ে।
৫০০: চ্যাম্পিয়ন্স লীগে মাত্র তৃতীয় ক্লাব হিসেবে ৫০০ গোলের কীর্তি গড়লো বায়ার্ন। তাদের চেয়ে বেশি গোল কেবল বার্সেলোনা (৫১৭) ও রিয়াল মাদ্রিদের (৫৬৭)।
৫: মাত্র পঞ্চম ফরাসি খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে গোল করলেন কিংসলে কোমান। এমন কৃতিত্ব রয়েছে করিম বেনজেমা (২০১৮), জিনেদিন জিদান (২০০২), মার্সেল ডেসাই (১৯৯৪) ও বাসিল বোলির (১৯৯৩)।
৫৫: ৫৫ বছর ১৮১ দিন বয়সে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের স্বাদ পেলেন বায়ার্ন কোচ হ্যানসি ফ্লিক। তারচেয়ে বেশি বয়সে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছেন মাত্র তিন জন। ১৯৯৩ সালে মার্শেইকে ৭১ বছর বয়সে চ্যাম্পিয়ন করেন রিমন্ড গোয়েথালসের। ২০১৩ সালে ইয়ুপ হেইঙ্কেস বায়ার্নকে চ্যাম্পিয়ন করেন ৬৮ বছর বয়সে। আর স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ১৯৯৯ সালে ৫৭ বছর ও ২০০৮ সালে ৬৬ বছর বয়সে ম্যান ইউনাইটেডকে চ্যাম্পিয়ন করেন।
৭: সবশেষ যে সাত ক্লাব ইউরোপিয়ান কাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে প্রথমবার ফাইনাল খেলেছে, তাদের সবাই হারলো। সবশেষ প্রথমবার কোনো ক্লাব ফাইনালে ওঠেই ট্রফি জিতেছিল ১৯৯৭ সালে। জুভেন্তাসকে হারিয়ে সেবার চ্যাম্পিয়ন হয় বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।
৪২: চ্যাম্পিয়ন্স লীগের এবারের আসরে নিজেদের শেষ ১০ ম্যাচে বায়ার্নের গোল ৪২টি। এক আসরে তাদের বেশি গোল করার ঘটনা আছে মাত্র একটিই। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে বার্সেলোনা ১৬ ম্যাচে ৪৫ গোল করে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *