যুবককে ৯ টুকরো করে পদ্মার চরে পুঁতে রাখল কিশোর গ্যাং!

কুষ্টিয়ায় মিলন হোসেন নামে এক যুবককে ৯ টুকরো করে হত্যা করেছে কিশোর গ্যাং। নিখোঁজের আটদিন পর পদ্মা নদীর চরের ছয়টি জায়গা থেকে লাশের টুকরাগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ।  Advertisement

শুক্রবার দিনগত রাত ১২টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহ এলাকায় পদ্মার চরে অভিযান চালিয়ে এগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের টুকরোগুলো সাতটি ব্যাগে রাখা ছিল।

পুলিশ বলছে, চাঁদার দাবিতে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাবেক সহ-সভাপতি ও কিশোর গ্যাংয়ের নেতা এসকে সজীবের নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। 

পুলিশ সজীবসহ পাঁচজনকে আটক করেছে। তাদের জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।

নিহত মিলন হোসেন (২৭) কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাহিরমাদি গ্রামের মাওলা বক্স সরদারের ছেলে। তিনি স্ত্রী মিমি খাতুনকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই-ব্লকে ভাড়া বাসায় থাকতেন। 

টেক্সটাইল প্রকৌশলে পড়ার পাশাপাশি তিনি অনলাইনে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করতেন। এ কাজের মাধ্যমে তার প্রচুর টাকা আয় হয়েছিল।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, চাঁদার দাবিতে এ হত্যাকাণ্ড হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। জড়িত কয়েকজনকে আটকের পর তাদের দেখানো জায়গা থেকে লাশের ৯টি টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে সজীব নামে এক যুবকের ফোনকল পেয়ে মিলন শহরের ভাড়া বাসার বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। ওই দিন সন্ধ্যায় তার স্ত্রী মিমি খাতুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। 

মিলনের স্ত্রী মিমি খাতুন বলেন, গত রোজার ঈদের পর মিলনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। মিলন খুব ভদ্র প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। 

তিনি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর তারা মিলনকে উদ্ধারে সজলের সহযোগিতা চেয়েছেন। তার হাতে পায়ে ধরেছেন। এমনকি তারা সজলকে টাকা দিতেও চেয়েছেন কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
 
মিলনের বোন সেলিনা খাতুন বলেন, চার বোনের একমাত্র ভাই ছিলেন মিলন। বড় আদরের এই ভাইকে এমন নৃশংসভাবে খুন হতে হবে এটা তারা বিশ্বাস করতে পারেছন না।

নিহতের শ্বশুর মহিবুল হক অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ প্রথমে মিলনকে উদ্ধারে সেভাবে কাজ করেনি। সময় মতো চেষ্টা করলে হয়তো তাকে জীবিত উদ্ধার করতে পারত পুলিশ। 
 
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে প্রথমে মিলনের এক বন্ধুকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, আরেক বন্ধু সজীবের নেতৃত্বে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে। পরে শুক্রবার বিকালে অভিযান চালিয়ে সজীবসহ আরও চারজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মিলনকে হত্যার পর তার লাশ টুকরা করে পদ্মার চরে পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করেন।

তাদের সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার রাত ২টার দিকে হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহ পদ্মা নদীর চরে পুলিশ অভিযানে যায়। রাতভর অভিযান চালিয়ে নদীর চরের ছয়টি স্থান থেকে মিলনের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র বাধবাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে টাকার দাবিতে মিলনকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছেন আটককৃতরা। জড়িতরা সবাই একে অপরের পরিচিত। নিখোঁজের দিন তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে হাউসিং এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ওই দিন রাতেই তাকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুম করার সুবিধার্থে ধারাল অস্ত্র দিয়ে ৯ টুকরো করে নদীর চরে পুঁতে রাখা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারই বন্ধু সজীব। এর সঙ্গে অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা, তা নিয়ে আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

স্থানীয় লোকজন জানান, এসকে সজীব কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভাঙচুর ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরের অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করা হয়। সেই মামলায় কারাগারে ছিলেন তিনি। এছাড়া তার নামে চাঁদাবাজিসহ বেশ কিছু মামলাও রয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্চুক হাউসিং এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সজীবের নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বে একটি কিশোর গ্যাং পরিচালিত হয়। তাদের কাজ ছেলে-মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা দাবি করা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *