যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্ব পরিস্থিতির অপ্রত্যাশিত উন্নতি, উচ্ছ্বসিত ট্রাম্প

আশঙ্কাজনক অবনমনের পর গত মে মাসে হঠাৎ করেই অপ্রত্যাশিত উন্নতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের। এপ্রিলে দেশটিতে যেখানে বেকারত্বের হার ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে মে মাসে তা নেমে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। মূলত দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় চাকরিতে নিয়োগ পেতে শুরু করেছেন মার্কিন নাগরিকরা। এ অবস্থায় দেশটির অর্থনীতি সংকটাবস্থা কাটিয়ে ফের স্বরূপে ফিরছে বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন খোদ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বোপরি চাকরিবাজারের এ উন্নতিতে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব যতটা তীব্র হবে বলে মনে করা হচ্ছিল, বাস্তবে পরিস্থিতি ততটা ভয়াবহ হবে না। খবর বিবিসি ও এএফপি।

মার্কিন শ্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছিল যে যুক্তরাষ্ট্রকে মে মাসে আরো একবার বাজে বেকারত্ব হারের সম্মুখীন হতে হবে। বিশ্লেষকরা ভেবেছিলেন, মাসটিতে বেকারত্বের হার বেড়ে ২০ শতাংশ বা তারও বেশি হতে পারে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আশ্চর্যজনকভাবে এ সময়ে উল্টো নতুন করে চাকরি সৃষ্টি হয়েছে ২৫ লাখ। এ উন্নতির মূলে রয়েছে দেশজুড়ে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ফের কার্যক্রমে ফেরা। বিশেষ করে খাদ্য, নির্মাণ ও স্বাস্থ্য খাতের চাকরিদাতারা কার্যক্রমে ফেরার পাশাপাশি কর্মীদের কাজে ডাকছেন। একই সঙ্গে নতুন করে কর্মী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে শিক্ষা ও খুচরা বিক্রি খাতেও।

চাকরিবাজারের এ উন্নতির বিষয়ে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ জাস্টিন উলফেরস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বলেন, ‘সত্যি বলতে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে মে মাসের শুরুর দিকে কিংবা মাঝামাঝি সময়ে অর্থনীতি তলানিতে এসে ঠেকেছিল। এখনো আমরা বড় ধরনের গভীর গর্তে অবস্থান করছি। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে বেশ সময় লাগবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু আশার কথা হলো, অন্তত নতুন করে সংকটের এ গর্ত আর গভীর হচ্ছে না।’

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাকরিবাজারের এ উন্নতিতে দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার তিনি ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখন রকেটের মতো ধাবিত হচ্ছে। হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখন রকেট জাহাজের মতো। তবে এ সময় সাংবাদিকদের কাছ থেকে ট্রাম্প নভেল করোনাভাইরাস কিংবা পুলিশের হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নাগরিক জর্জ ফ্লয়েড হত্যা এবং এ ঘটনার প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভ নিয়ে কোনো প্রশ্ন গ্রহণ করেননি। এছাড়া টুইটারে নিজের প্রশংসায় ট্রাম্প লেখেন, ‘সত্যিকার অর্থেই চাকরিবাজারের জন্য এটি বড় খবর। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসাধারণ কাজ করে চলেছেন (মজা করছি কিন্তু সত্যি)!’

মূলত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। একই সঙ্গে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘোষণাও তার জন্য নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তবে চাকরিবাজারের সুখবরে তিনি যেন ফের পায়ের নিচে মাটি ফিরে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে নিয়েছি। বিশ্বের ইতিহাসে আমাদের অর্থনীতি সর্বসেরা এবং এ অর্থনৈতিক শক্তিই আমাদের ভয়াবহ মহামারী মোকাবেলায় সহায়তা করেছে। আমার মনে হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা বেশ ভালো করছি।’

শ্রম বিভাগ বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে নেয়া লকডাউনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে মার্চ ও এপ্রিলে মার্কিন অর্থনৈতিক কার্যক্রম একেবারেই থমকে দাঁড়ায়। ফলে এ দুই মাসে চাকরি হারায় ২ কোটি ১০ লাখ আমেরিকান। এ অবস্থায় সীমিতভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলে বেকারদের জন্য ফের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আপাতত চাকরিপ্রাপ্ত বেকারের সংখ্যা তুলনামূলক কম। কিন্তু তার পরও বেকারত্ব হ্রাসের বিষয়টি সার্বিকভাবে মার্কিন অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *