যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বাণিজ্য থামাতে চীনের ‘অকার্যকর’ নিষেধাজ্ঞা কৌশল

তাইওয়ানের কাছে ২৪০ কোটি ডলারে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। স্বাভাবিকভাবেই এ সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ করেছে বেইজিংকে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তারা কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ।

তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা চলছে কয়েক মাস ধরে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির এ সিদ্ধান্ত সেই উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাইওয়ানের কাছে যুদ্ধজাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রিতে অনুমোদনের ইঙ্গিত দিয়েছে। সোমবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বোয়িংয়ের তৈরি ১০০টি হারপুন কোস্টাল ডিফেন্স সিস্টেম বিক্রির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং মার্কিন কংগ্রেসকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তাইওয়ান প্রণালিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়ে যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্তে অনড় যুক্তরাষ্ট্র। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাইওয়ানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।’

আসলে তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব জোরদারের চেষ্টা চালাচ্ছে। গত সপ্তাহেই ১৮০ কোটি ডলারে চীনা নিয়ন্ত্রণাধীন দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে তাইওয়ানের কাছে ৬৬টি নতুন এফ-১৬ জেট বিক্রি করে ট্রাম্প প্রশাসন। গত আগস্টে লকহিড মার্টিনের তৈরি জেটগুলোর বিক্রি সম্পন্ন হয়।

তাইওয়ান এই অস্ত্র বিক্রির অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। তবে চীন বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। এ কারণে শি জিনপিং প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা চাপ দিতে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িংয়ের প্রতিরক্ষা ইউনিট, লকহিড মার্টিন করপোরেশন ও রেথিয়ন টেকনোলজিস করপোরেশনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘মূলত জাতীয় নিরাপত্তা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যেই চীন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি নিয়েছে।’ বেইজিং মনে করে, তাইওয়ানকে যুদ্ধ সরঞ্জাম দেয়ার মাধ্যমে ওয়াশিংটন এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। আগস্টে এফ-১৬ জেট বিক্রির সময় ঝাও লিজিয়ান বলেছিলেন, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ওয়ান চায়না নীতিতে আঘাত করেছে এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে বলে সে সময় ঝাও মন্তব্য করেন।

কিন্তু চীন যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নীতি নিয়ে এগোচ্ছে, তার আদৌ কোনো প্রভাব পড়ছে কি? নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল হিসেবে দাবি করা তাইওয়ানের কাছে পিএসি-৩ ক্ষেপণাস্ত্র ও মিসাইল ব্যাটারি বিক্রির কারণে গত জুলাইয়ে লকহিড মার্টিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বেইজিং। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞার বাস্তবিক কোনো প্রভাবই পড়েনি কোম্পানিটির ওপর। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিফেন্স কন্ট্রাক্টরের মোট রাজস্বের ১ শতাংশেরও কম আসে চীন থেকে।

এদিকে চীনের কাছে পাঁচ দশক ধরে উড়োজাহাজ সরবরাহ করে আসছে বোয়িং। চীনের এয়ারলাইনারগুলো বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার, ৭৩৭ ম্যাক্সের মতো উড়োজাহাজ ব্যবহার করে। বেইজিং এসব বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বোয়িং ক্ষতিগ্রস্ত হবে বটে, তবে প্রতিরক্ষা ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞায় তাদের কোনো লোকসানে পড়তে হবে না। কারণ এ ইউনিট থেকে কোনো পণ্য চীনে যায় না।

প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি জেট ইঞ্জনসহ অন্যান্য অ্যারোনটিক সরঞ্জাম তৈরি করে রেথিয়ন। এ ধরনের যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে চীনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ ন্যারো-বডি ইঞ্জিনসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ যন্ত্রাংশই রেথিয়ন ও জেনারেল ইলেকট্রিকের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলো তৈরি করে। সুতরাং তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের অর্থ হলো চীনের সরবরাহই বন্ধ হয়ে যাওয়া।

চীনের জন্য সবচেয়ে পীড়াদায়ক বিষয়, যে তাইওয়ানের ওপর দখলদারি চালায় তারা, সেই দেশটিই যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহে বেশ উত্ফুল্ল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জোয়নে ওউ বলেছেন, ‘তাইওয়ানের নিরাপত্তা ঘাটতি মোকাবেলায় অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আর্জি জানাচ্ছি আমরা।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *