যুক্তরাষ্ট্রও পারছে না আর্মেনিয়া আজারবাইজান যুদ্ধ থামাতে

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তৃতীয়বারের মতো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল বিরোধপূর্ণ নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে যুদ্ধরত আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। কিন্তু এ যুদ্ধবিরতিও স্থায়ী হলো না। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সামরিক সংঘাত শুরুর পর এর আগে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় হওয়া দুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিও লঙ্ঘন করেছিল দেশ দুটি। খবর রয়টার্স।

গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার রাতেও বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে গোলাবর্ষণ হয়েছে। এর জন্য একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে বিবদমান দুই পক্ষ। এর মধ্যে গতকাল সকাল ৮টা থেকে তৃতীয় দফায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল আর্মেনিয়া-আজারবাইজান। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শুক্রবার থেকে দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত রোববার তৃতীয়বারের মতো যুদ্ধবিরতির মানবিক সিদ্ধান্তে পৌঁছায় দুই পক্ষ। কিন্তু গতকাল সকাল হতে না হতেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে দুই পক্ষ।

আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল যুদ্ধবিরতি ভাঙার জন্য সব দায় চাপিয়েছেন আর্মেনিয়ার ওপর। অন্যদিকে আর্মেনিয়ার প্রশাসন বলছে, আজারবাইজানই যুদ্ধবিরতির শর্ত মানছে না।

প্রায় এক মাস হলো নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে দেশ দুটি। প্রথম থেকেই দুই দেশকে শান্তির বৈঠকে বসানোর চেষ্টা করছে রাশিয়া। দুবার দেশটির মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে উভয় পক্ষ রাজি হলেও কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা লঙ্ঘন করেছে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান।

এর মধ্যে গত সপ্তাহে ফের দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে বসায় মস্কো। বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বৈঠক করেন আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও অচলাবস্থা কাটেনি।

এরপর প্রথমে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও পরে মার্কিন কূটনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেন আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের প্রতিনিধিরা। দীর্ঘ বৈঠকের পর রোববার সন্ধ্যায় নতুন করে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এ নিয়ে যৌথ বিবৃতিও প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, মানবিক কারণে সোমবার সকাল ৮টা থেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হচ্ছে।

তবে গতকাল সকালেই আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, তাদের তারতার শহরে হামলা চালিয়েছে আর্মেনিয়া। এরপর পাল্টা অভিযোগ তোলে আর্মেনিয়াও। তাদের দাবি, আজারবাইজানের সেনারাই প্রথম যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।

তৃতীয় দফার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে রোববার থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছিল। রোববার সকালে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের একটি টুইট বার্তায় সেই প্রশ্ন আরো বড় হয়ে দাঁড়ায়। তিনি লিখেছিলেন, নিজের দেশকে রক্ষা করার অধিকার সবার আছে। আজারবাইজান নিজের দেশকে শেষ দিন পর্যন্ত রক্ষা করবে।

ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় যখন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে, তখন আজারবাইজানের সেনাবাহিনী জানায়, আর্মেনিয়ার যুদ্ধবিমান আজারবাইজানের সীমান্তে ঢুকে পড়ায় তা ধ্বংস করা হয়েছে।

নাগোর্নো-কারাবাখের সেনারা দাবি করেছেন, দিনভর ওই অঞ্চলের বিভিন্ন জনবসতি লক্ষ্য করে ক্রমাগত গোলাবর্ষণ করেছে আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী। আজারবাইজান অবশ্য গোলাবর্ষণের কথা অস্বীকার করেছে। কিন্তু তাদের দাবি, দিনভর মর্টার ও লাইট মেশিনগান নিয়ে যুদ্ধ চালিয়েছে সেনারা।

এদিকে ইরানের এলিট ফোর্স আইআরজিসি রোববার জানায়, আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সীমান্তে তারা সেনা মোতায়েন কয়েক গুণ বাড়িয়েছে। দুই দেশের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুই দেশের গোলায় ইরানের সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চল বিধ্বস্ত হয়েছে বলে এর আগে দাবি করেছিল ইরান।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *