নিলামযোগ্য পণ্য পেতে অনলাইনে অংশগ্রহণের সুযোগ আজ থেকে

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে তালিকাভুক্ত না হলেও নিলামযোগ্য পণ্য ক্রয়ে অনলাইনে অনুষ্ঠিত নিলামে অংশ নিতে পারবেন যে কেউ। সেক্ষেত্রে নিলামসংক্রান্ত স্থায়ী আদেশে উল্লেখ সাধারণ নিয়মাবলি অংশগ্রহণকারীদের অনুসরণ করতে হবে। এ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরে থাকা নিলামযোগ্য পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়ে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে বলে দাবি করছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে নিলামে অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অথবা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ই-অকশন ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন করে দরপত্র জমা দিতে পারবেন। যে কেউ দেশের যেকোনো স্থান থেকে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। ওয়েবসাইটে পণ্যের বিবরণ ও ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস অডিট, মডারাইজেশন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড) খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমানের উপস্থিতিতে অনলাইনে নিলাম কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। আজ প্রথম দিনে ১৬টি লটে অনলাইন নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এর দরপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে দুপুর ১২টা থেকে আগামীকাল বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ম্যানুয়াল নিলামে সিন্ডিকেটের কারণে নিলাম পণ্যের সঠিক দাম না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের বারবার নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়া, ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে নিলামে অংশ নেয়ার অভিযোগও আছে। এতে সাধারণ মানুষ উপযুক্ত দাম দিয়ে পণ্য কেনার ইচ্ছা থাকলেও নিলামে অংশ নিতে পারে না। নিলাম প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি অনলাইনে বাস্তবায়ন করা গেলে পণ্যের উপযুক্ত দাম পাওয়া যাবে এবং সরকার উপযুক্ত রাজস্ব পাবে।

ই-অকশন প্রক্রিয়ায় পণ্যের তালিকা ও দরপত্রের সবকিছু অনলাইনে দেখা যাবে। নিলামে অংশ নিতে ইচ্ছুকরা কাস্টমস অফিসে না এসে আবেদন করতে পারবেন। এরপর অনলাইনের মাধ্যমে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ দরদাতার নামে পণ্য বরাদ্দ দেয়া হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. ফখরুল আলম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, আগামীকাল (আজ) ১৬টি লট নিয়ে ই-অকশন কার্যক্রম শুরু হবে। অনলাইনে নিলামের এ প্রক্রিয়া আমরা ধারাবাহিকভাবে বাড়াতে থাকব। এর মধ্যে ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেলে সেগুলো এনবিআরের সহায়তা নিয়ে আমরা ঠিক করে নেব। এর আগে ২০১৮ সালে অনলাইনে নিলামের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, তখন কিছু কিছু এরিয়ায় সমস্যা চিহ্নিত হয়েছিল। এসব সমস্যা এনবিআরের সাপোর্ট নিয়ে পরবর্তী সময়ে ঠিক করা হয়েছে। ধাপে ধাপে অনলাইনে নিলাম পরিচালনা করতে গিয়ে যখন দেখা যাবে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ছে না, তখনই শতভাগ ই-অকশন আমরা বাস্তবায়ন করব। অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা, নিলাম প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে ও পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতেই অনলাইনে নিলাম করার এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীকে কাস্টম হাউজে আসতে হবে না। বরং বাসা কিংবা অফিস যেকোনো জায়গায় বসেই অনলাইনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সাবমিট করে নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

বর্তমানে আমদানি হওয়া পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নেয়ার আইনগত বিধান রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিস দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নোটিস দেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এ পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আমদানিকারকের আনা ঘোষণাবহির্ভূত পণ্যও নিলামে তোলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পণ্যের বাজারদর যাচাই করে কর্তৃপক্ষ। এরপর কাস্টমস ডিউটি ও পোর্ট চার্জ যুক্ত করে এর প্রাক্কলিত দর নির্ধারণ করা হয়। কোনো পণ্যের প্রথম নিলামে প্রাক্কলিত দরের ৬০ শতাংশ দর পেলে তা বিবেচনায় আনা হয়। অন্যথায় দ্বিতীয় দফা নিলাম আহ্বান করতে বলা হয়েছে। প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয় দফায় বেশি দর পেলে নিলামে ওঠা পণ্য বিক্রি করা যাবে। অন্যথায় আহ্বান করতে হবে তৃতীয় দফা টেন্ডার। সর্বশেষ এ টেন্ডারে দর যা উঠবে, তাতেই পণ্য দিতে বাধ্য থাকবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এ সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে নিলাম কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *