যশোর এলজিইডির ৬৭% সড়কই বেহাল

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগাঁ থেকে ধলগ্রামের সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে দীর্ঘ সাত কিলোমিটার সড়কটির বিভিন্ন স্থান দেবে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি সড়কের পিচ, সুরকি, ইট উঠে গিয়ে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই ওইসব গর্তে পানি জমে থাকে। বেহাল রাস্তার কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

শুধু বাঘারপাড়ার ওই সড়কই নয়, যশোর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন মোট সড়ক রয়েছে ৯ হাজার ২৪০ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬ হাজার ২৩০ কিলোমিটার রাস্তা বেহাল। যা শতাংশের হিসাবে ৬৭.৪২। এছাড়া পাকা রাস্তা রয়েছে ২ হাজার ২৩১ কিলোমিটার এবং আংশিক পাকা সড়ক রয়েছে ৭৭৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার।

বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম, দোহাকুলা ও জামদিয়া ইউনিয়নের মধ্যে পাকা সড়ক প্রায় সাত কিলোমিটার। এ সড়ক দিয়ে খলশী, বহরমপুর, নওয়াপাড়া, মামুদালীপুর, বাউলিয়া, বালিয়াডাঙ্গা, বরভাগ, ধলগ্রামসহ ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়তই চলাচল করে। এটি মানুষের চলাচলের জন্যে একমাত্র পথ হওয়ায় চরম দুর্ভোগের মাঝে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের। রাস্তা বেহাল হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে দুর্ভোগ। শুকনো মৌসুমে চলাচল করা গেলেও চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় বর্ষা মৌসুমে।

বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ইমরান হোসেন বলেন, রাস্তায় গর্ত থাকায় মোটরসাইকেল চালাতে হিমশিম খেতে হয়। জরুরি ভিত্তিতে রাস্তার সংস্কার করা প্রয়োজন।

রাস্তার ধারেই রয়েছে কয়েকটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা। প্রতিনিয়তই স্কুলের শিক্ষার্থী, যানবাহন চালক, পথচারীসহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভ্যানচালক তরিকুল ইসলাম জানান, রাস্তায় গর্তের কারণে ঠিকমতো ভ্যানগাড়ি চালাতে পারি না। এতে যানবাহন দুর্ঘটনাকবলিত হয়। ইজিবাইকচালক আবু সাইদ বলেন, রাস্তায় ছোট-বড় গর্তের জন্য যাত্রীরা আরামে গাড়িতে বসতে পারেন না। তার পরও ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালাতে হয়।

বাঘারপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আবু সুফিয়ান জানান, জরাজীর্ণ রাস্তাগুলোর দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই ঠিকাদার সংস্কারকাজ শুরু করবেন।

যশোর এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক রয়েছে মণিরামপুর উপজেলায় ৩৫৪ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়ক। আর কম কেশবপুরে ১৭৫ দশমিক ১১ কিলোমিটার। এছাড়া অভয়নগরে সড়ক রয়েছে ১৭৭ দশমিক ৪ কিলোমিটার, বাঘারপাড়ায় ২০৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার, চৌগাছায় ২১৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার, ঝিকরগাছায় ২৯৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার, সদরে ৩১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার এবং শার্শা উপজেলায় সড়ক রয়েছে ২৫০ দশমিক ২ কিলোমিটার।

চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল থেকে দশপাকিয়ার তিন কিলোমিটার রাস্তাই ভাঙাচোরা। একই অবস্থা রামকৃষ্ণ থেকে কুলিয়া, বল্লবপুর সড়কের। পাশাপোল গ্রামের ব্যবসায়ী শিমুল হোসেন ও জুলফিকুর রহমান জানান, তাদের গ্রামের কাঁচা সড়কের অবস্থা খুবই বেহাল। বিশেষ করে বর্ষাকালে চলাচল করা যায় না এসব সড়ক দিয়ে। এলজিইডি থেকে লোক আসে কিন্তু সংস্কার হয় না।

চৌগাছা উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মতিন জানান, কাঁচা সড়কগুলো সংস্কারে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে এগুলো সংস্কার করা হবে।

এ ব্যাপারে এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর্জা মো. ইফতেখার আলী জানান, আমরা প্রতি বছর ১৫০ কিলোমিটার রাস্তা নতুন করে সংস্কার করছি। যেগুলো আংশিক ভাঙা, সেগুলো সংস্কার করছি। বর্তমান সরকার গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারে বেশি নজর দিয়েছেন। আমরাও সরকারের উদ্যোগ সফল করার চেষ্টা করছি। আসছে অর্থবছরও এলজিইডির অধীন যশোরের বিভিন্ন কাঁচা সড়ক পুনর্নির্মাণ করা হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *