ময়লা আবর্জনায় স্তূপ সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকত

জিয়াবুল হক: [২] দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের সমুদ্র সৈকত এলাকায় ময়লা-আবর্জনা স্তূপ। সৈকতের আশেপাশে যেখানে-সেখানে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। কেয়াবন ও প্রবাল দ্বীপ থেকে শুরু করে সাগরে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে দ্বীপের নীল জলরাশি। বর্জ্যের চাপে মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে সেখানকার জীববৈচিত্র্য। ফলে সংশ্লিষ্টরা দেখেও না দেখার ভান করে আছে।

[৩] জানা যায়, স্বচ্ছ নীল জলরাশি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দ্বীপটিতে প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে আসেন হাজারো পর্যটক। এসব পর্যটকের কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সৌন্দর্য রক্ষার্থে বিধিনিষেধ আরোপ করে নানামুখী আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। কাজ করছে পরিবেশ অধিদফতরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। দ্বীপজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্লাস্টিক, চিপসের প্যাকেট, আচারের প্যাকেট, পলিথিন, ক্যান, চায়ের কাপ, পানির বোতল, স্ট্র, প্যাকেট, মাছ ধরার জালের টুকরো, নাইলনের দড়িসহ বিভিন্ন অপচনশীল বর্জ্য। এছাড়া ছোটবড় শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি যোগ হয় গৃহস্থালীর বর্জ্য। সেন্টমার্টিন জুড়ে ময়লা-আবর্জনা। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোর বর্জ্য যাচ্ছে সরাসরি সাগরে। এগুলো দেখার জন্য সেন্টমার্টিনে কেউ নেই। এ কারণে পরিবেশ অধিদফতরসহ দ্বীপ নিয়ে কাজ করা সংস্থার কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা।

[৪] দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন আসেন। তারা অন্তত কয়েক হাজার কেজি বর্জ্য সৃষ্টি করেন। এসব ধারণের মতো ডাস্টবিনও দ্বীপে নেই। মাঝেমধ্যে কিছু প্লাস্টিকের বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হলেও বেশিরভাগ বর্জ্য যত্রতত্র পড়ে থাকে, সাগরে ভেসে যায়।’

[৫] এব্যাপারে সেন্টমার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কিছু সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। তারা পর্যটক এবং স্থানীয়দের স্বার্থে কিছুই করেন না। দ্বীপ এবং সৈকত পাড়ে রয়েছে অনেক দোকান। এসব দোকানি ডাব, পানীয় এবং খাদ্য বিক্রি করে পর্যটন মৌসুমে ভালো ব্যবসা করেন। কিন্তু সৈকত পাড়ের দোকানিরা বিচের আশপাশে ময়লা আবর্জনা রেখে দেন।’

[৬] এবিষয়ে সেন্টমার্টিনে দায়িত্বরত পরিবেশ অধিদফতরের কর্মী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলতে প্রতিনিয়ত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু পর্যটকরাই তো পাত্তা দেন না। পরিবেশ অধিদফতর একা তো দ্বীপ রক্ষা করতে পারবে না। দ্বীপের প্রশাসনও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে না।’[১] এমপি হিসেবে শপথ নিলেন নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নদক্ষিণ আফ্রিকায় ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাও অমিক্রনে আক্রান্তআগস্টে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত

[৭] বরিশাল মুলাদী থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আসা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখনই বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তা না হলে দিন দিন এ দ্বীপ নষ্ট হয়ে যাবে। হুমকিতে পড়বে এখানকার বাস্তুসংস্থান।

[৮] উল্লেখ্য: ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার ও টেকনাফ সৈকতসহ দেশের ছয়টি এলাকাকে সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। তা সত্ত্বেও পর্যটকের অবাধ যাতায়াত, দ্বীপের ভারসাম্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা না রেখে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ, কেয়াবন উজাড়, পাথর উত্তোলন করে নির্মাণকাজে ব্যবহারসহ পরিবেশ বিধ্বংসী নানা কাজ চলছেই। এতে গত দেড় যুগে দ্বীপের ভাঙনও প্রকট হয়েছে। এ ছাড়া শামুক, ঝিনুক, প্রবাল, শৈবাল, পাথর আহরণ ও সরবরাহও চলছে।

[৯] কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতর ও মৎস্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, সেন্টমার্টিন দ্বীপে রয়েছে ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৫৭-১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ২৪০ প্রজাতির মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী ও ১২০ প্রজাতির পাখি। এছাড়া সামুদ্রিক কাছিম, সবুজ সাগর কাছিম এবং জলপাইরঙা সাগর কাছিম প্রজাতির ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে জায়গাটি প্রসিদ্ধ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *