‘মৃণাল কাজ করে যাও’

ভাস্কর মৃণাল হক (৬২) শুক্রবার দিবাগত রাত প্রায় ২টার দিকে গুলশানের বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন মৃণাল হক। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। মৃণাল হক ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানে ভাস্কর্য নিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০০২ সালে বিদেশ থেকে ফিরে এসে দেশেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। দেশে ফিরে নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেন মতিঝিলের ‘বলাকা’ ভাস্কর্যটি। ২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মিত গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার তারই শিল্পকর্ম। সারা দেশে তিনি অনেকগুলো ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ করেছেন। ঢাকায় তার করা ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে ‘রত্নদ্বীপ’, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে ‘রাজসিক’, পরীবাগ মোড়ে ‘জননী ও গর্বিত বর্ণমালা’, ইস্কাটনে ‘কোতোয়াল’, সাতরাস্তায় ‘বর্ষারানী’, মতিঝিলে ‘বলাকা’, নৌ সদর দপ্তরের সামনে ‘অতলান্তিকে বসতি’, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের ভাস্কর্য, বঙ্গবাজারে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য। মৃণাল হকের প্রয়াণে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তার শিক্ষক এবং দেশের খ্যাতিমান প্রবীণ শিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান।

মৃণাল আমার ছাত্র ছিল। সে প্রচুর কাজ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, অনেকেই তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন; তবুও সে কাজ করে গেছে। সে তার নিজের মতো করে কাজ করত। তার কাজের ধরন ছিল বাস্তববাদী। সে অ্যাবস্ট্রাক্ট ধরনের কাজে যায়নি। নিরীক্ষার দিকে না গিয়ে বরং পরিচিত বিষয়বস্তু ও ফর্মে কাজ করেছে; যে কাজ সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে, পছন্দ করবে। এ কারণে শিল্পী হিসেবে তার পরিচিতিও বেশি ছিল।

সমসাময়িক কাজের মধ্যে তার এক্সপেরিমেন্টাল কাজ ছিল না। তবে মৃণালের কাজের মধ্যে চেইন (লোহার শিকল) দিয়ে করা কিছু কাজ ছিল বেশ ব্যতিক্রমী। কিছু গাড়ি ও রিকশার কাজ করেছিল। তেজগাঁওয়ের দিকে একটা গাড়ি ছিল চেইন দিয়ে করা। কাজটা বেশ ভালো ছিল। এখন তো আর্টের ধরনে পরিবর্তন এসেছে, সে সেসবে যায়নি। তার বাড়িতে একটা মিউজিয়ামের মতো করেছিল। সেখানে তার প্রায় সব কাজই বাস্তবধর্মী; মানুষ চেনে, বোঝে, পছন্দ করে এমন।

মৃণালের সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল সে অনেক কাজ করত। কাজের নেশা ছিল তার। সে আমাকে বলত, স্যার অনেকেই বিরূপ সমালোচনা করে। আমি বলেছি, ‘মৃণাল কাজ করে যাও।’ কাজ করলে কাজে পরিবর্তনও আসে। মৃণাল বেঁচে থাকলে হয়তো আরো অনেক ভালো ভালো কাজ করে যেত।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *