মহামারীর ধাক্কায় ১৯৪৬-পরবর্তী সবচেয়ে বাজে বছর কাটাল যুক্তরাষ্ট্র

করোনা মহামারীর ধাক্কায় গত বছর ১৯৪৬ পরবর্তী সর্বোচ্চ সংকোচনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। চলতি বছরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আশা করলেও এখনো আশাবাদী কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। খবর এএফপি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২০ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। করোনার ধাক্কায় স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়েছে এবং এতে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।

মার্চের শুরু থেকে কার্যকর হওয়া লকডাউন এবং তার ফলে কর্মী ছাঁটাই বৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় নেমে আসে তা থেকে উত্তরণের পথ এখনো স্পষ্ট নয়। মার্কিন শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপাত্তে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে বেকারত্ব সুবিধা দাবি করছেন ১৩ লাখ আমেরিকান। এ উপাত্তগুলো সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য অশনীসংকেত। চলমান স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ কার্যকর করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বাইডেন।

হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক ব্রায়ান ডিজ বলেন, প্রকাশিত উপাত্তে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে পড়েছে। দ্রুত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আমেরিকানদের কাজে ফেরা এবং নিজের পায়ে দাঁড়ানো অসম্ভব ঠেকবে। কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করার আর্থিক ক্ষতি অকল্পনীয় ঠেকবে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বিশ্লেষক ন্যান্সি ভান্ডেন হুতেন বলেন, আরো অতিরিক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে আসা এবং বিস্তৃত ভ্যাকসিন কার্যক্রমে আগামী বসন্তেই শ্রমবাজার উন্নত হতে পারে। কিন্তু অব্যাহত সংক্রমণ ও করোনার নতুন স্ট্রেইন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুরু থেকেই করোনা মহামারী মার্কিন অর্থনীতিতে করাল থাবা বসিয়েছে। গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতি রেকর্ড ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। করোনা নিয়ন্ত্রণে শুরুতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে অর্থনীতিতে এ প্রভাব পড়েছিল। অবশ্য বছরের শেষ প্রান্তিকে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল মার্কিন অর্থনীতি। কিন্তু তা সত্ত্বেও গত বছর সংকোচন এড়াতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর নিট রফতানি ১৩ শতাংশ কমেছে এবং ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয় কমেছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

যদি মার্কিন আইনপ্রণেতারা বাইডেনের প্রণোদনা বিলটি পাস করে, তাহলে শ্রমবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এতে ২০২১ সালে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ সম্প্রসারিত হতে পারে।

শ্রম মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানায়, গত সপ্তাহে মৌসুমভিত্তিক সমন্নয়কৃত ৮ লাখ ৪৭ হাজার আমেরিকান নিয়মিত বেকারত্ব সুবিধার আবেদন করেছে। এছাড়া অন্য ৪ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন মৌসুমভিত্তিক সমন্বয়ের বাইরে আবেদন করেছে যারা স্বাভাবিক সময়ে এ সুবিধার জন্য বিবেচিত হতো না। সব মিলিয়ে গত ৯ জানুয়ারি নাগাদ প্রায় ১ কোটি ৮৩ লাখ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

হাই ফ্রিকোয়েন্সি ইকোনমিকসের বিশ্লেষক রুবেলা ফারুকি এক বিশ্লেষণে জানান, যদি সংক্রমণ কমানো না যায় এবং অর্থনীতি পুরোপুরি চালু না হয়, তাহলে অর্থনীতি দুর্বল থাকবে এবং পুনরুদ্ধার বিলম্বিত হবে।

তবে মার্কিন অর্থনীতির একটি ব্যতিক্রমী জায়গা ছিল চাঙ্গা সম্পদ ও আবাসন বাজার। বেকারত্ব বাড়লেও নতুন ও পুরনো বাসাবাড়ি বিক্রি গত বছর চাঙ্গা ছিল। নিম্ন সুদের হারের সুবিধা কাজে লাগিয়ে যারা পেরেছে তারা বাসা-বাড়ি কিনেছে। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২০ সালে নতুন বাড়ি বিক্রি হয়েছে ৮ লাখ ১১ হাজার, যা ২০০৬ সালের পর সর্বোচ্চ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *